Advertisement
E-Paper

চাকা থেমে আছে, চলছে না সংসার

খেতি-জমি নেই, আবার ছোট থেকে স্টিয়ারিং ধরেই বয়স জীবনের অর্ধেক সময় পার করে ফেলে এখন দিনমজুর বা চাষের কাজ করতেও পারেন না।

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৩
ঘরের দাওয়ায় নাতনির সঙ্গে বলরাম। নিজস্ব চিত্র

ঘরের দাওয়ায় নাতনির সঙ্গে বলরাম। নিজস্ব চিত্র

চাকা ঘোরেনি এক মাস হয়ে গিয়েছে। চাকা না ঘুরলে টাকাও তো আসে না। টানা লকডাউনে বাড়িতে বসে থেকে খুদে নাতনির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন কান্দির যশোহরির বাসিন্দা প্রৌঢ় বলরাম দাস। পেশায় বাসের চালক। কপাল মন্দের কারণে কোনও বাসের স্থায়ী চালক হিসাবে কাজ পাননি। মাসে মেরেকেটে ২০ দিন কাজ জোটে। বাকি দিন বাড়িতে বসেই কাটাতে হয়। যে দিন কাজ জোটে সেদিন পাঁচশো টাকা করে পান। মাসে হাজার দশেক টাকা উপার্জন হয় তাঁর।

ওই সামান্য উপার্জনের মধ্যে বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও বছর দু’য়েকের নাতনি আছে। সংসারটা তাঁকেই টানতে হয়। গ্রামের পাশের একটি চালকলে কাজ করতেন ছেলে প্রভাত দাস। কিন্তু ওই চালকলটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এক কাঠা জমির উপর বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে দুই কামরার একটি বানিয়েছেন। ওই বাড়ির দরজা, জানালা দেওয়ালে প্লাস্টার কোনও কিছুই করতে পারিনি। তার উপর দশ মাস আগে এক মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন বলরাম।

মেয়ের বিয়ের দেনা মেটাতে পারেনি বলে জানিয়ে বলরাম বলেন, “একটার পর একটা খরচ হচ্ছে। তার উপর লকডাউনে এমন বেকায়দায় পড়ে গিয়েছি কাওকে বলতে পারি না। কার কাছে ঋণ করব! সকলেই অবস্থা একই।”

খেতি-জমি নেই, আবার ছোট থেকে স্টিয়ারিং ধরেই বয়স জীবনের অর্ধেক সময় পার করে ফেলে এখন দিনমজুর বা চাষের কাজ করতেও পারেন না। রেশনের বিনা পয়সায় চাল ও আটা পেয়েছিলেন সেখান থেকে দিন কয়েক চলেছে। কিন্তু এখন কী ভাবে দিন গুজরান করবেন সেটাই ভেবে দিশাহারা হয়ে পরেছেন বলরামের স্ত্রী বন্দনা দাস। তিনি বলেন, “বাস চালিয়ে যেটুকু উপার্জন হয়েছে তাতে আমাদের সংসারে স্বচ্ছল না হলেও কোনও দিন অভাব ছিল না। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেই অভাবটা বুঝতে পারছি। ঘরে চাল নেই এমনটা কোনও সময় হয়নি, এই প্রথম আমার সংসারে চাল নেই, জানি না এমন সমস্যা কবে দূর হবে।”

বাড়ির বারান্দায় আনাজপাতি কাটতে কাটতে পুত্রবধূ মৌসুমী দাস বলেন, “স্বামী কাজ নেই। তবুও বাবার কাজ ছিল, সেখান থেকেই আমাদের সকলেই দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। মেয়ের দুধের ব্যবস্থাও করতে পেরেছিলাম। এখন প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে মেয়ের জন্য দুধ দেয়, সেটাই মেয়েকে খাওয়াই।”

লকডাউনের সময় বাজারে আনাজপাতি নিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলরাম। ‘‘কিন্তু যে হাতে এতকাল বাসের স্টিয়ারিং ধরেছে সেই হাতে দাঁড়িপাল্লা ধরব কী ভাবে’’, বলছেন বলরাম।

West Bengal Lockdown Coronavirus Bus Driver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy