Advertisement
২০ মে ২০২৪

‘মশারি টাঙাস বাপ’, আর্জি জাহেরার 

পথ চলতি ছেলে-ছোকরা দেখলেই হাঁক পাড়ছেন, ‘দে বাবা একটা টাকা দে।’ কাছে এলে সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন ডেঙ্গির সতর্কতা। পিঁপড়েখালি পঞ্চায়েতের ভিক্ষাজীবী জাহেরা বেওয়ার সেই ডেঙ্গি-ভীতিকে তাই কাজে লাগিয়েছে জেলা প্রশাসনও। দিনভর গাঁ-গঞ্জে চাল-আলু না হয় দেড়-দু’টাকা ভিক্ষের সময়ে  কপালে হাত ঠেকিয়ে জাহেরার নিদান দিয়ে আসছেন, ‘‘খোদার মেহেরবানি ডেঙ্গি না কামড়ায়, বাপজান হে রাতে মশারিটা খাটাতে ভুলো না!’’

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০১
Share: Save:

কবেকার গোলাপি রং এখন ফ্যাকাসে আলোর মতো ম্লান। রংচটা সেই ছেঁড়াখোঁড়া মশারি থেকে শীর্ণ এক খানা হাত বের করে বুড়িমা বলছেন, ‘‘হেই বাবা দু-চার আনা যা দিবি দে, তবে মশারির ভিতর থেকে বেরসনি যেন। ডেঙ্গি কামড়ালেই এক্কারে মরণ কিন্তু!’’

মুর্শিদাবাদের ছোট্ট জনপদ হরিহরপাড়ায় হতশ্রী পঞ্চায়েত ভবনের পরিত্যক্ত বারান্দায় তাই বিকেল থেকে মশারির মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকেন তিনি, আর পথ চলতি ছেলে-ছোকরা দেখলেই হাঁক পাড়ছেন, ‘দে বাবা একটা টাকা দে।’ কাছে এলে সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন ডেঙ্গির সতর্কতা। পিঁপড়েখালি পঞ্চায়েতের ভিক্ষাজীবী জাহেরা বেওয়ার সেই ডেঙ্গি-ভীতিকে তাই কাজে লাগিয়েছে জেলা প্রশাসনও। দিনভর গাঁ-গঞ্জে চাল-আলু না হয় দেড়-দু’টাকা ভিক্ষের সময়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে জাহেরার নিদান দিয়ে আসছেন, ‘‘খোদার মেহেরবানি ডেঙ্গি না কামড়ায়, বাপজান হে রাতে মশারিটা খাটাতে ভুলো না!’’

জীবনের পিছনটা বড়ই আবছা হয়ে এসেছে। এখন আর বর-ছেলে-পরিবার হারানো স্বজনদের কাউকে মনে পড়ে না তাঁর। স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে গ্রাম-সংসার। রোদে পুড়ে-ভিজে সেই সব দিন কবেই উবে গিয়েছে। ভিক্ষের আড়ালেই দু’টুকরো খাবার, না পেলে পোড়া হাঁড়িতে চালেডালে ফুটিয়ে নিত্যকার দিন যাপন জাহেরার। তবু জীবন এখনও মহার্ঘ হাতছানি দেয় তাঁকে। তাই জনে জনে বলে বেড়ান, ‘‘ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচতে হবে বাবা, একবারও যেন কামড় বসাতে

না পারে!’’

শেষ বর্ষায় মুর্শিদাবাদের নওদা এবং হরিহরপাড়া এলাকায় নতুন করে ডেঙ্গির ছায়া পড়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অন্তত বারো জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। এলাকায় ঘুরছে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে দিনভর অটো কিংবা রিকশায় সরকারি প্রচার।

সেই প্রচারে কান পেতেই জাহেরার ডেঙ্গি ভীতি। তবে, তা যে মশা বাহিত রোগ তা বোঝেন না তিনি। তাঁর কল্পনায় ডেঙ্গি এক ভয়াল পতঙ্গ! তাই সারাক্ষণ বিড়িবিড় করছেন, ‘‘এক বার কামড় বসালেই না, অক্কা!’’ সেই ভয় থেকেই গত কয়েক মাস ধরে লোকের কাছে একটা মশারি ভিক্ষে করে শেষতক এই ছিন্ন মশারি পেয়েছেন তিনি।

সকালটা, গাঁ-গঞ্জে মশারির প্রচার আর বিকেল থেকেই মশারির অন্দরে ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াই এই দিনযাপনেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন জাহেরা।

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE