Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
elephant

যুবককে আছড়ে মারল হাতি

বনের মধ্যে দিয়েই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাতিটিকে চলে যেতে দেখা গেলেও এখনও জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকাও অসম্ভব নয়।

সেই হাতি। নিজস্ব চিত্র।

সেই হাতি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে হাতির আক্রমণের শিকার হলেন এক যুবক। বনের মধ্যে ওই যুবককে সামনে পেয়ে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আছড়ে পায়ের তলায় পিষে দেয় হাতিটি। মৃতের নাম রাজকুমার তুরী (২২)। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ফরাক্কার বাহাদুরপুরের চাঁদোর গ্রাম লাগোয়া বনাঞ্চলের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৫টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তার বাড়ি চাঁদোর গ্রামেই। মেটালে দিনমজুরির কাজ করতেন তিনি।

নদিয়া মুর্শিদাবাদ ডিভিসন বিভাগীয় বন আধিকারিক প্রদীপ বাউরি জানান, ফরাক্কা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চাঁদোর গ্রামের কাছে যে বনাঞ্চল রয়েছে সেখানেই বৃহস্পতিবার সকালে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ওই বনাঞ্চলটি ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বাগদাবড়া বিটের অধীনে। কী করে হাতিটি ওই জঙ্গলে এল তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পাকুড়ের জঙ্গল থেকে হাতিটি এসেছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পরপরই বনাঞ্চলের সঙ্গে জড়িত লোকজন ও গ্রামবাসীরা তাড়া করে হাতিটিকে ঝাড়খণ্ডের দিকে পাঠিয়ে দেয়।

বনকর্মীরা ওই এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন। কারণ তড়িয়ে দিলেও ফের সে হাতির ওই এলাকায় দ্রুত ফিরে আসার একটা প্রবণতা থাকে। এর আগে ২০১৫ সালেও হাতির উপদ্রবের ঘটনা ঘটেছিল ফরাক্কার ওই এলাকায়। সেবার হাতি তাড়াতে গিয়ে রেকাব হোসেন নামে এক বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল ফরাক্কার ডিয়ার ফরেস্টে।
তিনি বলেন, “তবে এই ডিভিসনে এই ধরনের ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তবু কিভাবে ঘটল, খাবারের খোঁজে নাকি দলছুট হয়ে কোন পথে হাতিটি ফরাক্কায় ঢুকল বন দফতর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সরকারি নিয়ম মত যা যা করণীয় সব কিছুই করা হচ্ছে। বনকর্মীরা ফরাক্কার ওই এলাকায় রয়েছেন। গ্রামবাসীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে আগামী ২৪ ঘন্টা।”

চাঁদোরে হাতির হানায় মৃত রাজকুমারবাবুর বাড়িতে মা, স্ত্রী ও ৮ মাসের সন্তান রয়েছে। রাজকুমারেরা ৪ভাই। সকলেই দিনমজুর। স্বামীর হঠাত এভাবে মৃত্যুর ফলে আকাশ ভেঙে পড়েছে তার পরিবারের মাথায়। কীভাবে চলবে তাদের সংসার সে প্রশ্ন তুলে সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন মৃতের স্ত্রী রীতা তুরী।

রীতা বলেন, “চাঁদোর গ্রামের চারিদিকেই জঙ্গল। তবে কখনও সেভাবে হাতির উপদ্রব নেই। এদিন ভোরে প্রতিদিনের মতই প্রাতঃভ্রমণে যান স্বামী একাই। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে চলে গেছে পিচ রাস্তা। আধ ঘন্টার মধ্যেই বাড়িতে খবর আসে হাতিতে পায়ে পিষে দিয়েছে স্বামীকে। ছুটে যাই প্রতিবেশিরা সকলেই। ততক্ষণে সবশেষ। গিয়ে দেখি বনের মধ্যে মাটিতে পড়ে রয়েছে স্বামীর রক্তাক্ত দেহ।”

ঘটনার পরপরই ঝাড়খণ্ডের রাস্তার দু দিকে থমকে যায় একাধিক যানবাহন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকা জুড়ে। স্থানীয় লোকজন হৈ হুল্লোড় করে কোনওরকমে মিনিট চল্লিশের মধ্যেই হাতিটিকে তাড়িয়ে দেয়। বনের মধ্যে দিয়েই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাতিটিকে চলে যেতে দেখা গেলেও এখনও জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকাও অসম্ভব নয়। স্বভাবতই এদিন জঙ্গলের মধ্যে গরু, ছাগল চরানো ও পাতা কুড়োনের জন্য গ্রামবাসীরা তেমন কেউই ঢোকেননি।

বন দফতরের রেকর্ডে সেভাবে হাতির আনাগোনা নেই ফরাক্কার এই এলাকায় বলে বলা হলেও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে হাতির তাণ্ডবে অস্থির হয়ে উঠেছিল বনদফতর ও ফরাক্কা এলাকার বাসিন্দারা। ৪টি দাঁতাল হাতি বীরভূমের ঝাড়খণ্ডের কোটালপুকুরের জঙ্গল থেকে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ফরাক্কার গ্রামে ঢুকে পড়ে। পাঁচ দিন ধরে ফরাক্কা থেকে ধুলিয়ানের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ায় তারা। পরে তাড়া খেয়ে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে ঢুকেই অশান্ত হয়ে ওঠে দাঁতালের একটি। বারহারোয়া থানার আধারকোঠা গ্রামের মাঠে কর্মরত আনিসুর রহমান নামে এক বৃদ্ধকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে পায়ে পিষে দেয় দাঁতালটি।

পরের রাতেই পাকুড়ের কাছে গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে দুটি দাঁতাল ফের ঢুকে পড়ে চাঁদোর গ্রাম হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে ফরাক্কার বাগদাবড়া জঙ্গলে। পৌঁছে যায় ফরাক্কার ডিয়ার ফরেস্টে। পাশেই ঝাড়খণ্ড। তাই চেষ্টা হচ্ছিল হাতি দুটিকে ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের দিকে ফেরাতে। সেই সময় একটি হাতি মাটিতে আছাড় মারে এক বনকর্মীকে। মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে আর একটি দাঁতাল সুতির রাতুরি হয়ে পরদিনই নিমতিতার কাছে গঙ্গা নদী সাঁতরে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। সীমান্তের দেড় কিলোমিটার ভিতরে বাংলাদেশের শিবগঞ্জ লাগোয়া একটি গ্রামের কাছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের জওয়ানরা সেদিনই দুপুরে গুলি করে মারে দাঁতালটিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE