Advertisement
E-Paper

মৃত স্ত্রীকে টোটোয় চাপিয়ে হাসপাতালে যুবক, ধৃত তিন

নাটক করেও শেষরক্ষা হল না! স্ত্রীর নিথর দেহ টোটোয় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। চিকিৎসককে খুব উদ্বিগ্ন গলায় বলেছিলেন, ‘‘বাড়িতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন ডাক্তারবাবু।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০১:৩৫
পুনম হালদার। — নিজস্ব চিত্র।

পুনম হালদার। — নিজস্ব চিত্র।

নাটক করেও শেষরক্ষা হল না!

স্ত্রীর নিথর দেহ টোটোয় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। চিকিৎসককে খুব উদ্বিগ্ন গলায় বলেছিলেন, ‘‘বাড়িতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন ডাক্তারবাবু।’’ নবদ্বীপ মালঞ্চপাড়ার বাসিন্দা পুনম হালদারের (২১) নিথর দেহ পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পুনমদেবীর দেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। তাঁরা বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেই নিজের বাবা-মাকে চিকিৎসকদের সামনে এগিয়ে দিয়ে হাসপাতাল থেকে চম্পট দেন পুনমদেবীর স্বামী সীতাংশু দেবনাথ। অভিযোগ, পুনমকে বাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করে তারপরে হাসপাতালে এনেছিলেন অভিযুক্ত সীতাংশু।

বুধবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরে পুনমদেবীর বাবা সাধন হালদার নবদ্বীপ থানায় জামাই-সহ আট জনের বিরুদ্ধে পণের জন্য অত্যাচার ও খুনের মামলা রুজু করেন। ওই রাতেই পুলিশ সীতাংশুর বাবা, মা ও ভগ্নিপতিকে গ্রেফতার করে। সীতাংশু পলাতক। তাঁর খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নবদ্বীপ আদালতে ধৃতদের হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নবেন্দু মণ্ডল জানান, ধৃত জীবনকৃষ্ণ দেবনাথ, গঙ্গা দেবনাথ এবং অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮(এ), ৩০৪(বি) এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে নদিয়ার কালীগঞ্জের বল্লভপাড়ার বাসিন্দা সাধন হালদারের বড় মেয়ে পুনমের সঙ্গে নবদ্বীপ মালঞ্চপাড়ার বাসিন্দা সীতাংশুর বিয়ে হয়েছিল। সাধনবাবুর সামান্য কিছু জমি জায়গা রয়েছে। অন্য দিকে সীতাংশুর বাবা জীবনকৃষ্ণ এলাকায় সম্পন্ন ব্যবসায়ী বলে পরিচিত। তাঁদের ছিট কাপড় এবং টেলারিং-এর দোকান আছে। কিন্তু পুনমদেবীর স্বামী সীতাংশু ওরফে রাজু কার্যত কিছুই করেন না। দুর্ব্যবহারের কারণে তাঁদের সঙ্গে এলাকাবাসীর তেমন সদ্ভাবও নেই। প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে পুনমের উপর অত্যাচার হত। পারিবারিক ব্যাপারে প্রতিবেশীদের নাক গলানো মোটেই পছন্দ করতেন না দেবনাথ বাড়ির সদস্যেরা। তা নিয়ে ওই পরিবারের উপর স্থানীয়দের ক্ষোভও ছিল।

এ দিন পুনমদেবীর অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ভাঙচুর করা হয় দেবনাথ পরিবারের বাড়িঘর। বাড়ির লাগোয়া ছিটকাপড়ের দোকানের জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। দমকল এবং পুলিশের বিরাট বাহিনী গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনে।

বুধবার রাতের দিকে পুনমের বাপের বাড়ি থেকে আত্মীয়-স্বজনেরা এসে পৌঁছন। নবদ্বীপ হাসপাতালে মেয়ের মৃতদেহ দেখে জ্ঞান হারান পুনমের মা মীরাদেবী। পরে তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র টাকার জন্যই ওরা আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলল। আমাদের সত্যিই আর দেওয়ার মতো টাকা নেই। এটা ওরা বিশ্বাস করল না। তার খেসারত দিতে হল মেয়েটাকে।’’

পুনমের বাবা সাধনবাবুর অভিযোগ, বিয়ের সময় পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে তিনি ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা নগদ, ১২ ভরির উপর সোনার গয়না ছাড়াও মোটরবাইকের জন্য চল্লিশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তারপরেও মেয়ের শ্বশুরবাড়ির জীবন সুখের হয়নি। সাধনবাবু বলেন, “অষ্টমঙ্গলা থেকে ফেরার পরেই টাকার জন্য মেয়ের উপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আমাদের কোনও কদর ছিল না। মাঝে মাঝেই ওদের চাহিদা মতো টাকা দিতে হত। মেয়েটাকে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত দিত না।’’

লিখিত ওই অভিযোগে সাধনবাবু আরও জানিয়েছেন, গত জামাইষষ্ঠীতে তিনি একটি গাড়ি কেনার জন্য সীতাংশুকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। পুনমের দাদা সঞ্জু হালদার বলেন, “ওদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। কিন্তু ওদের খিদে মেটাতে পারিনি। বোনের মৃত্যু সংবাদটা পর্যন্ত ওরা আমাদের দেয়নি। প্রতিবেশীরা আমাদের খবর দেওয়ার পরে আমি ফোন করি। আমার গলা শুনেই সীতাংশু ফোনটা কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়। আমরা ওদের কঠিন শাস্তি চাই।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে পুনমের দেহ তাঁর আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাতে কাটোয়া শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Nabadwip Youth punam police murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy