Advertisement
E-Paper

ভোটেই বদলা চান লাভপুরের জরিনা

বছর পাঁচেক আগের সেই সন্ধ্যার কথা আজও ভুলতে পারেন না বছর সত্তরের জরিনা বেওয়া। ২০১০ সালের বীরভূমের লাভপুর থানার বুনিয়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেওয়ার চোখের সামনে একে একে খুন হতে দেখেন তিনি ছেলেকে।

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫২
এখনও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি জরিনা বিবির পরিবারের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক>

এখনও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি জরিনা বিবির পরিবারের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক>

বছর পাঁচেক আগের সেই সন্ধ্যার কথা আজও ভুলতে পারেন না বছর সত্তরের জরিনা বেওয়া। ২০১০ সালের বীরভূমের লাভপুর থানার বুনিয়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেওয়ার চোখের সামনে একে একে খুন হতে দেখেন তিনি ছেলেকে। অভিযোগ, লাভপুরের বিধায়ক তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের কারসাজিতেই ওই তিন জন খুন হন।

এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কম চর্চা হয়নি। তারপর থেকেই সন্তানহারা ওই বৃদ্ধা বাড়িছাড়া। ভরা সংসার ফেলে রাতারাতি প্রাণভয়ে‌ তিনি চলে আসেন পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে। এ বার ভোটের মুখে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। প্রশাসনের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘বাড়ি ফিরে ভোট দিতে চাই। ভোট দিয়ে ছেলে খুনের প্রতিবাদ জানাতে চাই।’’

রাজ্যে তখন পালাবদলের সবে শুরু। বাম জমানার শেষের দিক। লাভপুরের ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে .নাম লিখিয়েছেন। জরিনা বেওয়ার নয় ছেলেই সিপিএমের সক্রিয় কর্মী। সম্পন্ন কৃষক পরিবারের অভাবের কোনও চিহ্ন ছিল না। পুকুর-খামারবাড়ি-মাঠ ভরা ফসল সবই ছিল ওই পরিবারের। নয় ছেলেদের আলাদা আলাদা বড় বাড়ি।

জরিনা বেওয়ার পরিবারের দাবি, মনিরুল দলবদল করতেই এলাকায় খুনোখুনির রাজনীতি শুরু হয়। মনিরুলের লোকজন তাঁদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজিও হয়। ‘যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাব আসে। দিনটা ছিল ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। জরিনা বেওয়ার আট ছেলে মনিরুলের বাড়িতে যান। অভিযোগ, ঝামে‌লা মেটানো তো দূরের কথা। উল্টে জরিনার ছেলেদের বাড়িতে ডেকে মনিরুল তৃণমূলে নাম লেখানোর জন্য চাপাচাপি করেন।

অভিযোগ, দলত্যাগ না করায় জরিনার তিন ছেলে—জাকের শেখ, কাটুন শেখ ও রইসুদ্দিন শেখকে কুপিয়ে খুন করা হয়। কোনওরকমে প্রাণে বাঁচেন জামাল শেখ। ওই ঘটনায় মনিরুল ইসলামকে মূল অভিযুক্ত করে ৫২ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশি তদন্তে মনিরুলে‌র নাম বাদ পড়ে। অভিযোগ, খুনের পর তৃণমূলের লোকজন নানা ভাবে ওই পরিবারের জীবিত সদস্যদের শাসাতে থাকে। ভয়ে জরিনা বেওয়া বুনিয়াডাঙা ছেড়ে ছেলে জামাল শেখ ও হাঁচু শেখকে নিয়ে বড়ঞার বদুয়াতে ভাইঝির বাড়িতে আশ্রয় নেন।

এতদিন পরও সেই সন্ধ্যার কথা বলতে গিয়ে ওই বৃদ্ধার চোখে-মুখের জ্যামিতিতে ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে। ভাইজির বাড়ির ছিটেবেড়ার ঘরে বসে জরিনা বেওয়া বলেন, “আমার তিন ছেলে খুন হল। কিন্তু বিচার পেলাম না। সে সব ভাবতে গেলে আজও ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয়।’’

এরপরই চোয়াল শক্ত করে ওই বৃদ্ধার প্রতিজ্ঞা, তবে ভোট দিয়েই ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাব। উল্লেখ্য, বিরোধী ঐক্যের দরুণ বীরভূম সহ গোটা রাজ্যেই শাসক দলের সেই জৌলুস ফিকে হয়েছে। এই আবহেই কি তিনি বাড়ি ফিরতে চাইছেন? অতশত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ও লোকসভাতেও ভোট দিতে পারিনি। ভোট দিতে চেয়ে কমিশনের কাছে আর্জিও জানিয়েছিলাম।’’ ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা জামাল শেখ জানালেন, ‘‘বোলপুরের মহকুমাশাসকের কাছে ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি। মনিরুলের হুমকির কাছে মাথা নোয়াতে পারব না। ভোট দিয়েই প্রতিবাদ করব।’’

ছেলেদের সঙ্গে জরিনা বিবি।

Zarina election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy