Advertisement
E-Paper

খুশির দিনেও বন্দি জুলেখা

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে, গত ১৪ মার্চ মেয়েটাকে তিনি বহরমপুরে সরকারি ‘শিলায়ন’ হোমে ছেড়ে এসেছিলেন। কিন্তু মন পড়ে ছিল এ দিকেই। পারবে তো মেয়েটা?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০২:০৫
হোমে: ছেড়ে আসার দিন, প্রধান শিক্ষক ও জুলেখা। ফাইল চিত্র

হোমে: ছেড়ে আসার দিন, প্রধান শিক্ষক ও জুলেখা। ফাইল চিত্র

ওরে মেয়ে, তুই পাশ করে গিয়েছিস! আরও বড় হ!

মাধ্যমিকের ফল হাতে নিয়ে শুধু এটুকুই জুলেখাকে বলতে চেয়েছিলেন নবগ্রামের সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল। পারলেন না!

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে, গত ১৪ মার্চ মেয়েটাকে তিনি বহরমপুরে সরকারি ‘শিলায়ন’ হোমে ছেড়ে এসেছিলেন। কিন্তু মন পড়ে ছিল এ দিকেই। পারবে তো মেয়েটা?

তাই শনিবার সকালে ফল জেনেই তড়িঘড়ি ফোন। জুলেখা খাতুনের গল্প যাঁরা জানেন না, তাঁদের মনে হবে, ৩২১ কী এমন আহামরি নম্বর, যা নিয়ে এত আহ্লাদ? তাঁরা তো বিয়ে রোখা মেয়েটার অসম্ভব প্রতিকূলতা ঠেলে এগোনো দেখেননি, বাড়ি ছেড়ে এসে স্কুলে জীবনবিজ্ঞানের ল্যাবে ঠাঁই নেওয়া, বাপ-মা ত্যাজ্য করলেও লক্ষ্যে অবিচল থাকার কাহিনিও জানা নেই তাঁদের। প্রধান শিক্ষক দেখেছেন মেয়েটাকে দিনের পর দিন, দেখভাল করেছেন, তাই তিনি এত উত্তেজিত।

কিন্তু ফোন পেলে তো!

হোমে ফোন করলেন, বেজে গেল। সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনস্থ ওই হোমের অফিস শনি আর রবিবার বন্ধ। অগত্যা হোমের সুপার শোভা গোস্বামীর মোবাইলেই ফোন করেন সঞ্জয়। ‘‘সকাল থেকে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। দুপুরের দিকে অবশ্য সুপার ফোন ধরেন। তখন উনি সম্ভবত ঘুমোচ্ছিলেন। ঘুম জড়ানো গলাতেই কথা বলছিলেন। আমি ওঁকে জুলেখার নম্বর জানালাম। ঠিক বুঝলাম না, আমার কথা বুঝতে পেরেছেন কি না’’— সংশয় প্রধান শিক্ষকের। পরে সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘হোমের কর্মীদের ফোন করে জুলেখাকে সব জানাতে বলেছি।’’

এ দিনটা কিন্তু হোমে বন্দি থাকতে চায়নি জুলেখা। চেয়েছিল স্কুলে যেতে, বন্ধুদের সঙ্গে খুশি ভাগ করে নিতে, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে। দু’দিন আগে হোম থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন করে এ দিন স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছিল সে। কিন্তু তা আর হল কই? হোম কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাইরে বেরনো যায় না। তার উপরে আবার সপ্তাহান্তের ছুটি। ফলে, সে ফোনে কথাটুকুও বলতে পারল না কারও সঙ্গে।

বিকেলে বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেট লাগোয়া ‘শিলায়ন’ হোমে গিয়ে গেটের দায়িত্বে থাকা মহিলা কর্মীকে অনুরোধ করা গেল, এক বার জুলেখাকে ডেকে দিতে। তিনি জানিয়ে দিলেন, তা সম্ভব নয়।

মেয়েটা কি আদৌ জেনেছে যে সে পাশ করেছে?

‘‘সোমবার অফিস খুললে পাশ-ফেল যা হয়েছে তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এখন আমি গেট ছেড়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে পারব না’’— বলে গেটে তালা লাগিয়ে দিলেন সেই মহিলা। তার পর চেয়ারে বসে সামনে টেবিলের উপরে পা তুলে মোবাইলের স্ক্রিনে মগ্ন হয়ে পড়লেন।

Madhyamik Madhyamik Result 2017 মাধ্যমিক Zulekha Mandal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy