তৃণমূলকর্মী কামাল শেখ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সাংসদ অধীর চৌধুরী ও নদিয়ার জিয়ারুল হক বুধবার আদালতে হাজির না থাকায় ফের পিছোল চার্জগঠন। ওই মামলার চার্জগঠনের জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন জেলা ও দায়রা বিচারক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস।
লোকসভার অধিবেশন চলছে। সেই কারণে অধীর চৌধুরী এ দিন আদালতে হাজির হতে পারেননি বলে তাঁর তিন আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায়, তুষার মজুমদার ও শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত এজলাসে জানান। অন্য দিকে জিয়ারুল হকের আইনজীবী হোসনে আরা বুলবুলের দাবি, মঙ্গলবার গভীর রাতে নদিয়ার থানারপাড়া থানার পণ্ডিতপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর মক্কেলকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। কিন্তু বুধবার বিকাল পর্যন্ত তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অভিযোগ উড়িয়ে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “কাউকে কোথাও থেকে তোলা হয়নি। পুরোটাই অভিযুক্তপক্ষের সাজানো।”
উভয়পক্ষের উত্তপ্ত সওয়াল-জবাব শোনার পর আগামী ২ সেপ্টেম্বর ওই মামলার চার্জগঠনের দিন ধার্য করেন বিচারক। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন, “২ সেপ্টেম্বর সবাইকে এজলাসে হাজির থাকতেই হবে।”
২০১১ সালের ১৫ মে বহরমপুর শহরের মোহনের মোড়ে তৃণমূলকর্মী কামাল শেখকে গুলি করে খুন করে এক দল দুষ্কৃতী। ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে পুলিশ ওই খুনের মামলার চার্জশিট দেওয়ার সময় অধীর চৌধুরী ও লোচন বাগদি নামের আরও এক জনকে যুক্ত করে ‘পলাতক’ দেখায় পুলিশ এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানায়। আবেদন মঞ্জুর হলে অধীর চৌধুরীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অধীর জামিন পান।
মাস খানেক আগেও কামাল খুনের এই মামলায় আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিকি অধীর চৌধুরীর পক্ষ হয়ে লড়েছেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সেই আবু বক্কর সিদ্দিকিকেই সরকার পক্ষের আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর, অর্থাৎ পি পি’) হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তার ফলে এত দিন অধীর চৌধুরীর জামিনের জন্য লড়াই করলেও এ দিন সেই জামিনই খারিজ করার জন্য আবু বক্করকে লড়তে হল। অন্য দিকে জি পি (গভর্মেন্ট প্লিডার)-র পদ থেকে সম্প্রতি অপসারিত করা হয় আইনজীবী তুষার মজুমদারকে। সেই তুষারবাবুর নেতৃত্বেই এ দিন অধীর চৌধুরীর দুই আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায় ও শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত আইনি লড়াইয়ে আবু বক্কর সিদ্দিকির সঙ্গে টক্কর দেন।
কাঞ্চনবাবু ও শুভাঞ্জন তাঁদের সওয়ালে বলেন, “লোকসভার অধিবেশনে সাংসদদের অংশগ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রপতি সাংসদদের চিঠি দিয়েছেন। অধিবেশন চলার কারণে সাংসদ অধীর চৌধুরীও এদিন বহরমপুরে আদালেতে এজলাসে থাকতে পারবেন না বলে আইনজীবীদের কাছে আগাম চিঠি দিয়ে পরবর্তী দিন ধার্যের জন্য আবেদন করেছেন।” এই প্রেক্ষিতে অগস্ট মাসের শেষে, বা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমে চার্জ গঠন করার জন্য দিন ধার্য করার দাবি জানান অধীরের আইনজীবীরা। যার প্রতিবাদ জানিয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, “সাংসদ অধীর চৌধুরী সাধারণ নাগরিক নন। তিনি আইন প্রণেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তিনিই দিনের পর দিন আদালতে গরহাজির থেকে কেবল বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিতই করছেন না, সেই সঙ্গে সাংসদ হিসাবে নিজের পদের প্রতিও সম্মানজনক আচরণ করছেন না।”
আবু বক্কর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, পরপর চার বার এজলাসে গরহাজির রইলেন অধীর। ওই প্রসঙ্গে কাঞ্চনবাবু পাল্টা বলেন, “৪ দিনের মধ্যে প্রথম দিনটিতে আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করায় আদালতে কাজ হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত থাকায় দ্বিতীয় দিনে অধীর আদালতে হাজির হতে পারেননি। লোকসভার অধিবেশন চলায় তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেও তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি।” প্রতি ক্ষেত্রেই অধীরের অনুপস্থিতির কারণ সঙ্গত বলে দাবি করেন তাঁর আইনজীবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy