উত্তরণ কাপের প্রথমার্ধের খেলা তখন মিনিট পঁচিশেক গড়িয়েছে। স্বরূপগঞ্জ জিপির বক্সের মুখে ওত পেতেছিলেন চরমাজদিয়া জিপি’র স্টপার, দশ নম্বর জার্সি পড়া রাজু দেবনাথ। হাফ লাইন থেকে সতীর্থ নন্দগোপাল রায় একটি মাটি ঘেঁষা পাস তাঁর দিকে বাড়াতেই নিখুঁত অনুমানে বিপক্ষের জনা তিনেক ডিফেন্ডারকে টপকে বলটি ধরেই মাঠের বাঁ দিক বরাবর একটা ছোট্ট দৌড়। বিপক্ষের খেলোয়াড়েরা বল কাড়তে পাল্টা দৌড় শুরু করার আগেই মাঠ জুড়ে কান ফাটানো চিত্কার---- গোওওওল। ততক্ষণে বল জড়িয়ে গিয়েছে স্বরূপগঞ্জ জিপির গোলরক্ষকের জালে।
সকার কাপের পর ফের উত্তরণ কাপ। নবদ্বীপের ফুটবলে ফের নন্দ-রাজু জুটির ম্যাজিকে সাফল্য। এ দিন ২-০ গোলে স্বরূপগঞ্জ জিপিকে হারিয়ে উত্তরণ কাপ জিতে নিয়েছে চরমাঝদিয়া জিপি। দ্বিতীয় গোলটি করেন সুমন সূত্রধর। তবে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে নজরকাড়া ফুটবল খেলে নন্দ-রাজু শুধু চরমাঝদিয়া জিপিকে উত্তরণ কাপ চ্যাম্পিয়নই করেননি, প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল এবং ফাইনাল মিলিয়ে মোট সাত গোল করে রাজু দেবনাথ হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। অন্য দিকে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে সকার কাপের মতো উত্তরণ কাপের ফাইনালেও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন নন্দগোপাল রায়। বিপক্ষ স্বরূপগঞ্জ জিপির খেলোয়াড়েরা এ দিন প্রথম থেকেও ডবল মার্কিং করে ঠেকাতে পারেননি নন্দ-রাজু দৌড়।
নবদ্বীপের কর্মমন্দির ফুটবল মাঠে বুধবার দুপুরে উত্তরণ কাপের ফাইনালে দু’দলের খেলোয়াড়দের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল রোদ। গঙ্গার পাড় ঘেঁষা মাঠে ঠা ঠা রোদ এ দিন জানান দিয়েছে বসন্ত নয়, এখন গরমের সময়। রোদের জন্য খেলা শুরুর সময়ে দর্শক সংখ্যাও কম ছিল। তবে খেলার সময় যত গড়িয়েছে মাঠে ফিরেছে ভিড়ের চেনা ছবি, ফিরেছে ফুটবলের চেনা উত্তেজনা। পাশাপাশি দুই পঞ্চায়েতের মধ্যে খেলার মাঠের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের উত্তেজনা এক সময় মাঠের দর্শকদেরও ছুঁয়ে যায়। রীতিমতো তেতে ওঠে মাঠ।
জেলা পুলিশের উদ্যোগে নবদ্বীপ থানার ব্যবস্থাপনায় এবং স্থানীয় আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থা, রেফারি অ্যাসোসিয়েশন, পুরসভা সহ বিভিন্ন ক্লাবের সহযোগিতায় এক সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত উত্তরণ কাপের ফাইনালে মাঠে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতীত দিনের একাধিক তারকা খেলোয়াড়। ছিলেন প্রাক্তন জাতীয় দলের অধিনায়ক বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্য, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে খেলা প্রদীপ তালুকদার, ইস্টবেঙ্গল প্রশিক্ষক পার্থ চক্রবর্তী এবং জাতীয় বাস্কেটবল খেলোয়ার সঞ্জয় চক্রবর্তী। খেলার মাঠে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা, জেলা পুলিশের একাধিক কর্তা-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ।
এই টুর্নামেন্টে কোনও আর্থিক পুরস্কার ছিল না। সুদৃশ্য চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এবং রানার্স ট্রফি ছাড়াও ছিল প্রতি খেলায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ, সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং টুর্নামেন্টের সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। প্রতি দলকে দেওয়া হয়েছে এক সেট করে জার্সি। ফাইনালের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচন করেন মাঠে উপস্থিত প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা। টুর্নামেন্টের সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে নবদ্বীপ বড়ালঘাট স্পোর্টিং ক্লাবের খেলোয়াড় সৌরভ হালদারকে। এই প্রসঙ্গে নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “সাড়ে তেরো বছরের সৌরভ হালদার ২০১৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলা জুনিয়র বিশ্বকাপের ভারতীয় দলের প্রাথমিক সিলেকশন ক্যাম্পে সদ্য সুযোগ পেয়েছে। নবদ্বীপ অঞ্চলের এই কিশোর ফুটবলারকেই তাই আমরা সেরা প্রতিভাবান হিসাবেই নির্বাচন করেছি।”
পরপর দুটি টুর্নামেন্টে ফুটবল ঘিরে সাধারন মানুষের আবেগ, খেলোয়াড় এবং ক্লাবগুলির সক্রিয়তা দেখে এলাকার প্রবীণ ফুটবলাররা আশাবাদী, নবদ্বীপে ফুটবলের ধারাবাহিকতা হয়তো বা আবার ফিরে এল। তবে ধারবাহিকতা নাকি নিছকই হুজুগ সেটা বুঝতে গেলে স্থানীয় লিগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy