Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুই ছাত্রের মৃত্যুতে মৌনী মিছিল স্কুলের

পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাকদহ থানার শিকারপুরে শোকমিছিল করলেন স্কুলের শিক্ষক-সহপাঠীরা। বুধবার সন্ধ্যায় মিস্ত্রিপাড়ায় পুকুর পাড়ে বোমাকে বল ভেবে খেলা করতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা যায় শরিফ মিস্ত্রি (১০) ও ইয়ানুর মণ্ডল (১১)। এলাকায় ‘হরিহর আত্মা’ বলে পরিচিত ওই দুই বালক শিকারপুর বিবেকানন্দ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে একই সেকশনে পড়ত।

মিছিলে সামিল পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

মিছিলে সামিল পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার নদিয়ার চাকদহ থানার শিকারপুরে শোকমিছিল করলেন স্কুলের শিক্ষক-সহপাঠীরা।

বুধবার সন্ধ্যায় মিস্ত্রিপাড়ায় পুকুর পাড়ে বোমাকে বল ভেবে খেলা করতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা যায় শরিফ মিস্ত্রি (১০) ও ইয়ানুর মণ্ডল (১১)। এলাকায় ‘হরিহর আত্মা’ বলে পরিচিত ওই দুই বালক শিকারপুর বিবেকানন্দ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে একই সেকশনে পড়ত। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা একটি মৌনী মিছিল বার করেন। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে দুই ছাত্রের বাড়ি গিয়ে শোকপ্রকাশের পাশাপাশি এমন ঘটনা ঘটল কী ভাবে, তা তদন্ত করে দেখার দাবি ওঠে মিছিলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন রায় বলেন, “শুনতে পাচ্ছি এলাকায় সম্প্রতি কিছু গোলমাল হচ্ছিল। গণ্ডগোল পাকাতেই ওই বোমাগুলি রাখা হয়েছিল পুকুর পাড়ে। মাঝখান থেকে বেঘোরে মৃত্যু হল আমাদের দুই ছাত্রের। ওই বোমা কারা রেখেছিল, কেন রেখেছিল তদন্ত করে দেখতে হবে। এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।” তপনবাবু জানান, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্রদের সচেতন করার কথা ভাবছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তপনবাবু বলেন, “ছাত্রদের আমরা সতর্ক করব, তারা যেন কোনও জিনিস পড়ে থাকতে দেখে না হাত দেয়। কোনও কিছু সন্দেহজনক মনে হলে আগে যেন পরিবার বা এলাকার লোকেদের জানায়।”

মদনপুর রেল স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মদনপুর ২ পঞ্চায়েতের মিস্ত্রিপাড়ায় নিহত দুই বালকের বাড়ি। ক্ষেতমজুর পরিবারের ছেলে শরিফ। তারা তিন ভাই-দুই বোন। শরিফের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে বাড়ি ইয়ানুরদের। তারা দুই ভাই। ইয়ানুর বড়। শরিফ আর ইয়ানুরের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। দু’জনে একসঙ্গে স্কুলে যেত, এক সঙ্গে খেলত। বুধবার বিকেলে দু’জনকে এক সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন এলাকাবাসী। সন্ধেয় মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার হচ্ছিল ইফতেহারের আর মাত্র এগারো মিনিট বাকি। এরই মধ্যে জোরালো একটা শব্দ শুনতে পান সকলে। স্থান্নীয় বাসিন্দা রফিকুল মিস্ত্রি বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম পাশে বিয়ের বাড়িতে বাজি ফাটছে বুঝি। এর পরই দেখি পুকুর পাড়ে ধোঁয়া। আমরা কয়েকজন ছুটে গিয়ে দেখি ইয়ানুর মাটিতে পড়ে রয়েছে। তাকে সেখান থেকে তুলে মুখে মাথায় জল দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে খানিকটা দূরে গিয়ে দেখি শরিফ পড়ে রয়েছে। রাতে খবর আসে ওরা দু’জনেই কল্যাণী জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে মারা গিয়েছে।”

শরিফের বাবা হুজুরালি মিস্ত্রি বলেন, “ছেলের সঙ্গে ভাত খেয়ে মাঠে গিয়েছিলাম। ওকেও বিকেলে মাঠে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু যায়নি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় দেখি রাস্তায় খুব ভিড়। কাছে গিয়ে দেখি আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। ওকে গাড়িতে তুলছে গ্রামের লোক।”

শরিফের দাদু কাশেম মণ্ডল বলেন, “এলাকার কিছু মানুষ নিশ্চয়ই জানেন, ওই বোমা সেখানে কারা রেখে গিয়েছিল। আমার বিশ্বাস তদন্ত করলে পুলিশ ঠিক ওদের ধরে ফেলতে পারবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি কালো ব্যাগ, বোমার উপকরণের টুকরো, টিনের কৌটো উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অনুমান, বোমা ব্যাগে রাখা ছিল। কারা ওই বোমা পুকুর পাড়ে মজুত করে রেখেছিল, তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রক্তের দাগ তখনও মোছেনি। চারিদিকে ঘন বন জঙ্গল। তবে, কারা-কেন ওই বোমা রেখেছিল, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি গ্রামবাসী। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। সিপিএমের চাকদহ জোনাল কমিটির সদস্য অসীম সরকার বলেন, “আমার মনে হচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই বোমা রেখেছিল। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের জন্যই জড়ো করেছিল ওরা। নির্বাচন মিটে গেলেও ওগুলোকে সরাতে ভুলে গিয়েছিল।” অভিযোগ অস্বীকার করে কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আমরাও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

death studentssilentrally ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE