Advertisement
E-Paper

নিয়ম ভেঙেই মাথা তুলছে আবাসন

সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান ‘বিমল কালচারাল হল’ আর নেই। বহরমপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ওই প্রেক্ষাগৃহ ও লাগোয়া বাগান মিলে ৮০ কাঠা জায়গায় এখন ছ’টি ব্লকের আবাসনে প্রায় দেড়শো থেকে দু’শো পরিবার বাস করেন। প্রথম পুরপ্রধান বৈকুণ্ঠ সেনের সৈয়দাবাদের বাড়ি ভেঙে গড়ে উঠেছে আবাসন। মহাত্মা গাঁধী থেকে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ওই বাড়িতে এসেছিলেন।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:২৯
গায়ে-গায়ে আবাসন। নিজস্ব চিত্র।

গায়ে-গায়ে আবাসন। নিজস্ব চিত্র।

সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান ‘বিমল কালচারাল হল’ আর নেই।

বহরমপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ওই প্রেক্ষাগৃহ ও লাগোয়া বাগান মিলে ৮০ কাঠা জায়গায় এখন ছ’টি ব্লকের আবাসনে প্রায় দেড়শো থেকে দু’শো পরিবার বাস করেন।

প্রথম পুরপ্রধান বৈকুণ্ঠ সেনের সৈয়দাবাদের বাড়ি ভেঙে গড়ে উঠেছে আবাসন। মহাত্মা গাঁধী থেকে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ওই বাড়িতে এসেছিলেন।

খাগড়া হরিবাবুর ঢালু এলাকায় ছিল সাহিত্যিক-ঐতিহাসিক-ভারততত্ত্ববিদ রামদাস সেনের বাড়ি। উনিশ শতকের নবজাগরণের পীঠস্থান ওই বাড়িতে প্রোমোটারের থাবা পড়েছে।

এই ভাবেই মুর্শিদাবাদের সদর শহরের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ভেঙে একের পর এক মাথাচাড়া দিয়েছে বহুতল আবাসনপশ্চিমবঙ্গ পৌর-গৃহনির্মাণ আইনের (২০০৭) তোয়াক্কা না করেই।

অভিযোগ, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে প্রতিটি আবাসনে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর অনুমোদন দিচ্ছে পুরসভা। নিয়ম হচ্ছে আবাসনের নীচে জলাধার নির্মাণ করতে হবে। পুরসভার সরবরাহ করা জল ওই জলাধারে সংগ্রহ করে রাখার পরে ছোট পাম্পের সাহায্যে তা তোলা হবে। কিন্তু হাতে গোনা দু’একটি আবাসন ছাড়া কোথাও জলাধার নির্মাণ হয় না। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে জল তোলার জন্য জলস্তর নেমে যাচ্ছে ক্রমশ।

এমন গলিতেও বহুতল আবাসনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে যেখানে দমকল গাড়ি ঢুকবে না। বছর খানেক আগে গোরাবাজারে অজন্তা সঙ্ঘের গলিতে এমনই এক বহুতল আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। কিন্তু দমকল বাহিনী এসেও ঢুকতে পারেনি। আবাসনের বাসিন্দারা বালতিতে করে জল বয়ে নিয়ে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ৭৫ বছরের উৎপল সিংহ চৌধুরী বলেন, “এত ফ্ল্যাট-বাড়ি হচ্ছে। সরেজমিনে খতিয়ে দেখে কম্পিলিশন সার্টিফিকেট দেওয়া উচিত। তা দেওয়া হয় না। পরে প্রোমোটারের কাজের ত্রুটি ধরা পড়ে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না। ঠিকাদার তত দিনে ফ্ল্যাট বানিয়ে পালিয়ে যায়।

এক্ষেত্রে ঠিকাদার ও পুরসভার মধ্যে অশুভ আঁতাত রয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নাগরিক সমাজ।

প্রবীণ নাগরিকদের কথায়, পুরসভার কোনও পরিকল্পনায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাভাবনা নেই। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আরও নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত হবে। যেমন এত মার্কেট তৈরি হচ্ছে। ওই মার্কেট শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারলে বেশ কিছু সমস্যা এড়ানো যেত। শহরের প্রাণকেন্দ্র কাদাই-খাগড়া এলাকা সুন্দর করে সাজানো যেত। কিন্তু তা হল না।

এই সব অভিযোগের কোনও সদুত্তর বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের কাছ মেলেনি। তিনি বলেন, “আমরা সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর কোনও অনুমতি দিই না। জলাধার নির্মাণ থেকে নিরাপত্তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তবেই কম্পিলিশন সার্টিফিকেট দিয়ে থাকি।”

যে দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বহরমপুরের নাগরিক সমাজ। শুধু তাই নয়, নকশা অনুমোদনে অনিয়ম নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বহরমপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ২০১২ সালে কলকাতা হাইকোর্টে এই নিয়ে মামলা করেছিলেন। সেই সময় হাইকোর্ট পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যকে ডেকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পুর-কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। পরে আদালত অবমাননার মামলাও করেছেন ওই চিকিৎসক। শ্রীকান্তবাবু বলেন, “বহুতল আবাসন নির্মাণ করতে হলে চার দিকে যে পরিমাণ জায়গা বা জমি ছেড়ে রাখা প্রয়োজন, কোনও ক্ষেত্রে তা মেনে চলা হচ্ছে না।” বহরমপুর নাগরিক সমিতির সহ-সভাপতি বিষাণকুমার গুপ্তের আক্ষেপ, “এই নিয়ে বলতে গেলে পুরপ্রধান মনোযোগ দিয়ে শোনেন। প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু পালন করেন না।” বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও অদ্ভূত ভাবে নীরব! প্রচ্ছন্ন মদতের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে?

housing berhampore subhasish saiyad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy