কৃষ্ণনগরের একটি মণ্ডপ সজ্জা। নিজস্ব চিত্র।
ইতিহাস বলে চারদিনের দুর্গাপুজো দেখতে পাননি বলে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কার্তিকী মাসের শুক্ল নবমীতে পুজো সেরেছিলেন জগদ্ধাত্রীর। সেই থেকে একদিনের পুজোই প্রচলিত কৃষ্ণনগরে। কিন্তু মানুষের ঢল সে কথা মানে কই। কৃষ্ণনগর হোক বা শান্তিপুর বৃহস্পতি বা শুক্রবার রাস্তা ভেসে গিয়েছে মানুষের মাথায়। সঙ্গে রয়েছে আলোয় জোয়ার।
অনেকেই বলছেন পুজোর দিনের ভিড় এড়াতেই আগে ভাগে ঠাকুর দেখে নেওয়া। আর সেই ‘আগেভাগে’ দেখে নেওয়ার ঠেলায় ত্রস্ত পুলিশ বাহিনী। এ বছরই কৃষ্ণনগর পুরসভা ১২৫ টি পুজো কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছে। সব ক’টি মণ্ডপই একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত।
গত কয়েক বছর ধরেই থিমের পুজো নজর কাড়ছে কৃষ্ণনগরে। ঘূর্ণি সেখানে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছে। কৃষ্ণনগরের প্রধান উৎসবের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠছে এই প্রান্তিক জনপদটি।
পিছিয়ে নেই শান্তিপুর। রাস এখানকার প্রধান উৎসব হলেও রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হাত ধরে কৃষ্ণনগরে যে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়েছিল কালক্রমে তা কৃষ্ণনগর শহরের মানুষের কাছে প্রধান উৎসবে পরিণত হয়। শান্তিপুরের সূত্রাগড়েও একই ভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। শোনা যায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির লোকেরা যাতে সূত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে পান তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেই সময়ই। তাই কৃষ্ণনগরে যে দিন প্রতিমা বিসর্জন হয়, সূত্রাগড়ে হয় তার পর দিন।
শান্তিপুর পুরসভার পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, ‘‘এক সময় ছোট রেলগাড়িতে চেপে কৃষ্ণনগর থেকে মানুষ সূত্রাগড়ে আসতেন বিসর্জন দেখতে। আর তাঁদের সমস্ত টিকিটের খরচ বহন করা হত রাজকোষ থেকে।’’
রাজা আর রাজকোষ না থাকলেও ঠাকুর দেখার সেই ধারা এখনও বহাল রয়েছে। শুধু কৃষ্ণনগর নয় আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ আসেন সূত্রাগড়ে। আর উৎসাহী মানুষের অকুণ্ঠ আবেগে পুজোর আগের রাতে ভেসে গিয়েছে সেই সব পুজো মণ্ডপ।
থিমের পুজো গুলো ঘিরে মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। সকলেই একবার চোখে দেখে নিতে চান এবারে ঠিক কেমন হচ্ছে কোন পুজো। আবার তাঁরাই চাষাপাড়ার বুড়িমার মত সাবেক বারোয়ারি পুজোকেও ছাড়তে নারাজ। তাই যত ভিড় হোক একবার বুড়িমার পুজো দেখে নেওয়া চাই। কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘প্রতিবারই মানুষ ভিড় এড়াতে আগের দিনই বেরিয়ে পড়েন। এবারও তার বিশেষ কোনও পরিবতর্ন হয়নি। বরং সেই সংখ্যাটা বেশি বলেই মনে হচ্ছে।”
সূত্রাগড়ও এ দিন ভেসে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে। দিন কয়েক পরেই রাস। এই উৎসবে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে শান্তিপুর। কিন্তু সূত্রাগড় যেন তার থেকে একটু আলাদা। সেখানে যাবতীয় মাতামাতি জগদ্ধাত্রীকে নিয়েই। এখানকার প্রাচীন পীরেরহাট, চড়কতলা বারোয়ারি, কৃষ্ণকালীতলা-সাহাপাড়া বারোয়ারি, সেনপাড়া বারোয়ারি, ষড়ভূজ বাজার বারোয়ারি, তাম্বুলি পাড়া, সূত্রধরপাড়া, নতুনবাজার বারোয়ারি, তুলসি মন্দিরতলা বারোয়ারি, কদবেলতলা বারোয়ারি, রাজপুতপাড়া বারোয়ারি, ছোটমা ও ব্রাহ্মণশাসনের পুজো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শুধু তাই নয়। এখানকার বিশেষত্ব অনুযায়ী জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে এখানে অন্য দেবদেবীরও পুজো হয়। তাদের সংখ্যাটাও কোনও মতে একশোর কম নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy