ভাঙচুরের পরে চাকদহ জিআরপি অফিস।—নিজস্ব চিত্র।
হাতের ব্যাগটি জাপটে ধরে প্রাণপণ ছুটছেন এক যুবক। তাঁকে তাড়া করে পিছনে ছুটছেন দু’জন জিআরপি। বুধবার সকালে চাকদহ প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে সেই দৌড় নেমে এসেছে রাস্তায়। আচমকা ওই দুই পুলিশকর্মী চিত্কার করতে শুরু করেন, “চোর...চোর...।”
পুলিশের ওই ‘সম্বোধন’ শুনে ঘাবড়ে গিয়ে যুবকটি একবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরক্ষণেই ফের দৌড়। এ বার দুই পুলিশে রক্ষা নেই, সঙ্গে আরও জনা পঞ্চাশেক লোক। সেই সঙ্গে সমস্বরে চিত্কার “চোর...চোর...।” বেশ কিছুক্ষণ ওই দৌড়-পর্ব চলার পরে রণে ভঙ্গ দেয় রেল পুলিশ। কিন্তু ‘পাবলিকের’ সঙ্গে পেরে ওঠা কি মুখের কথা! শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যান ওই যুবক। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় চড়, থাপ্পড়, লাথি। কোনও রকমে ওই যুবক হাতজোড় করে বলেন, “বিশ্বাস করুন, আমি চোর নই। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে শুধু একটা সিগারেট খেয়েছিলাম। হঠাত্ ওরা চোর চোর বলে চিত্কার করল কেন বুঝতে পারলাম না!”
পরনে জিন্স, ফুলহাতা শার্ট। পায়ে জুতো, কাঁধে চামড়ার ব্যাগ। বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের মার্জিত কথাবার্তা শুনে জনতার রাগ গিয়ে পড়ে রেল পুলিশের উপরে। “সামান্য সিগারেট খাওয়ার জন্য একজন ভদ্রলোককে পুলিশ চোর বলে তাড়া করবে? চলুন তো গিয়ে কেসটা দেখি।”-- বলে ওই যুবককে সঙ্গে করে বেশ কয়েকজন হাজির হয় চাকদহ জিআরপি অফিসে। সেখানে ওই যুবককে চোর অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা জিআরপি অফিস ভাঙচুর করে। ভেঙে দেয় রেল পুলিশের এক আধিকারিকের ঘরের টেবিলের কাচ। জল ঢেলে দেয় বিছানায়। মারধর করা হয় এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকেও। সেই তাণ্ডবে রেল পুলিশ ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। এখানেও ফের বেগতিক দেখে পালিয়ে বাঁচেন ওই যুবকও। পরে অবশ্য তাঁর কোনও পরিচয় কিংবা হদিশ পাননি কেউই।
রেল পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে দশটা। শান্তিপুরগামী লোকাল সবে স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। চাকদহ এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে তেমন ভিড়ও ছিল না। বছর ছাব্বিশের ওই যুবক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েই সিগারেটে বেশ কয়েকটি সুখটান দিয়েছেন। কিন্তু এ দিন সকালে তাঁর কপালে বোধহয় সত্যিই সুখে টান পড়েছিল! হাতে সিগারেট দেখে ওই যুবকের দিকে এগিয়ে আসেন দু’জন রেল পুলিশ। তাদের আসতে দেখে যুবকটি প্রথমে জোর পায়ে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটার গতি বাড়ায় পুলিশও। তারপর দৌড় এবং চোর বলে চিত্কার।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, “সিগারেট খাওয়ার জন্য পুলিশ একজনকে চোর বলবে? এটা কী মগের মুলুক নাকি! আইন মেনে যা করণীয় সেটাই তো ওরা করতে পারত।” চাকদহ জিআরপি-র ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গৌতম সর্দার বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। কাউকে চোর বলে ধাওয়া করা হয়নি। এক যুবক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। তাঁকে ডেকে আনা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি পালিয়ে যান। হঠাত্ উত্তেজিত জনতা এসে আমাদের অফিস ভাঙচুর করে, এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে মারধরও করে।”
কিন্তু প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে সিংহের হাটের দিকে ‘চোর চোর’ বলে যে দু’জন রেল পুলিশ এক যুবকের পিছনে চিত্কার করতে করতে ছুটছিল, তারা কারা? গৌতমবাবুর কাছে অবশ্য সে প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy