ভক্তিবালাদেবী মরে গিয়ে প্রমাণ করলেন এতদিন তিনি জীবিত ছিলেন।
গ্রামের বাসিন্দারাও সমস্বরে বলছেন, “একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছে সেই কবে। পাঁচটা মেয়েও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে। তারপর থেকে ওই বৃদ্ধা তো একাই থাকতেন। ভাগ্যিস স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা দেখাশোনা করত। কিন্তু এটাকে কী আর বেঁচে থাকা বলে গো! ৯১ বছর বয়সে বেচারা মরে গিয়ে বাঁচল।”
বর্ধমানে মন্তেশ্বর ব্লকের শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোজপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ভক্তিবালা দে। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক আগে। একমাত্র ছেলেও বেশ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। বিয়ের পরে মেয়েরাও তেমন যোগাযোগ রাখতেন না বলেই স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গত দশ বছর কার্যত একাই থাকতেন বৃদ্ধা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একা মানুষ। বয়সও হয়েছিল। রাতবিরেতে নানা রকম সমস্যা হত। প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে সাহায্য করতেন ঠিকই। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছিল না। ঠিক সেই সময়েই মুশকিল আসান করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় রামকৃষ্ণ সেবা সঙ্ঘের সদস্যরা। তাঁরাই শেষ কয়েক বছর ওই বৃদ্ধাকে দেখভাল করেছেন। বৃদ্ধাও তাঁদের নিরাশ করেননি। মৃত্যুর আগে এক কাঠা জমির উপর বসত বাড়িটি দান করেছেন ওই ক্লাবকেই।
ক্লাবের সম্পাদক পলাশ রায় বলেন, “ভক্তিবালাদেবীকে আমরা সকলেই দিদিমা বলেই ডাকতাম। কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করেই আমরাই তাঁর সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম।” ক্লাবের এক সদস্য বলছেন, “দিদিমা বার বার বলতেন, তাঁকে যেন নবদ্বীপের ঘাটেই দাহ করা হয়।” সে ইচ্ছেরও মর্যাদা দিয়েছেন ক্লাব সদস্যরা।
ইংরেজি বছরের প্রথম দিন ওই বৃদ্ধা নিজের বাড়িতেই মারা যান। তারপর আর দেরি করেননি পলাশবাবুরা। তড়িঘড়ি সব বব্যবস্থা করে সটান চলে আসেন নবদ্বীপ শ্মশানে। নববর্ষের বিকেলে দাহপর্ব সারা হলে পলাশবাবু বলছিলেন, “দিদিমা চলে যাওয়ার পরে আমরাও যেন কেমন অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। কত রকম গল্পই না উনি জানতেন! সময় অসময়ে আমাদেরও অনেক পরামর্শ দিতেন।”
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পার্থসারথী দে বলেন, “ওই ক্লাবের ছেলেদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। শেষ কয়েক বছর তো ওঁরাই ওই বৃদ্ধার দেখাশোনা করতেন। বৃদ্ধাও তাঁর শেষ সম্বল দিয়ে গিয়েছেন ওই ক্লাবের ছেলেদেরকেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy