আজও চালু হল না আজিমগঞ্জ-নশিপুর রেল সেতু। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
বৃহস্পতিবারের রেল বাজেট খুশি করতে পারল না মুর্শিদাবাদের মানুষকে।
জমি-জটিলতা কাটিয়ে নশিপুর রেল সেতুর উপর দিয়ে কবে থেকে ট্রেন চলাচল করবে ও পঞ্চাননতলা-চুঁয়াপুর রেল গেটের উপরে উড়ালপুল নির্মাণ কবে হবে নিয়ে জেলাবাসীর জিজ্ঞাসা অনেক দিনের। কিন্তু এ দিন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে ওই বিষয়ের কোনও উল্লেখ নেই। ফলে হতাশ জেলাবাসী।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পঞ্চাননতলা ও চুঁয়াপুরে উড়ালপুল নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। দুই উড়ালপুল নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দও করেন। উড়ালপুল তৈরি করার জন্য ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে রাস্তার দু’ধারের অস্থায়ী দোকান ঘর ভাঙাও হয়। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ না দেওয়ায় থমকে যায় উড়ালপুল তৈরির কাজ। ফলে ফের গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান।
এর আগে কৃষ্ণনগর-বহরমপুর ভায়া চাপড়া, করিমপুর এবং সাঁইথিয়া-চৌরিগাছা ভায়া কান্দি নতুন রেল লাইন গড়ে তোলার কথা হয়েছিল। কিন্তু এ বারের রেল বাজেটে সেই সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই বলে জানা গিয়েছে। কান্দি রেলওয়ে সংযুক্তিকরণ কমিটির সভাপতি প্রভাত কর বলেন, “ওই নতুন রেল লাইনের কথা ২০০৯ সালের রেল বাজেটে ঘোষণা হয়। পরের বছর ওই রেল পথের অনুমোদন দেয় রেল বোর্ড। ২০১১-২০১৩ সালের মধ্যে ৫৭.৫০ কিলোমিটার লম্বা ওই রেলপথ তৈরির জন্য সমীক্ষাও হয়।” কিন্তু জমি-জটে ওই রেলপথ তৈরির কাজ আটকে যায়। রাজ্য সরকার ওই ব্যাপারে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না করায় সেই কাজ আটকে রয়েছে। এমনিই মনে করেন তিনি।
কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর প্রামাণিক জানান, হাওড়া বা শিয়ালদহ যেতে হলে তাঁদের সালার বা বহরমপুর গিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। তাতে ব্যবসায়ীদের ভীষণ কষ্ট হয় বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই রেল বাজেটে কান্দি-সাঁইথিয়া রেলপথের কথা শুনে আসছি। কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে।”
তবে শুধু সাধারণ মানুষ নন, হতাশ রাজনৈতিক দলগুলিও। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “এ বারের রেল বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।” তিনি জানান, বিশেষ করে জেলার মানুষ নশিপুর রেল সেতুর উপর দিয়ে ঠিক কবে থেকে রেল চলাচল করবে তা জানতে আগ্রহী ছিলেন। সেই সঙ্গে বহরমপুরের পঞ্চাননতলা ও চুঁয়াপুর রেল গেটের উপরে দু’টি উড়ালপুল নিমার্ণের বিষয়টি নিয়েও তাঁরা উৎসুক ছিলেন। কিন্তু এ দিনের রেল বাজেটে সে সবের কোনও ঘোষণা নেই। যা তাঁদের হতাশ করেছে বলে জানান তিনি।
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষে স্বপন ভট্টাচার্য জানান, অন্তত, মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যটন শিল্পের দিকে তাকিয়ে এ বারের রেল বাজেটে নশিপুর রেল সেতু চালু করার বিষয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। তাঁর কথায়, “রেল ভাড়া না বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করবে হয়তো এই রেল বাজেট।”
সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “নতুন প্রাপ্তি বলতে কিছু নেই এই রেল বাজেটে। এতে জেলার সাধারণ মানুষই বঞ্চিত হল।” তাঁর কথায়, “ রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলি নিয়েও কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নেই এই রেল বাজেটে। সব মিলিয়ে ব্যাপারটি বেশ হতাশার।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “এ বারের রেল বাজেটে জেলার মানুষের জন্য কিছুই নেই। কাটোয়া-ফরাক্কা ভায়া আজিমগঞ্জ ডাবল লাইন, নশিপুর রেল সেতু চালু করার ব্যাপারে এ বারের রেল বাজেটে কোনও উল্লেখ নেই।”
তাই নশিপুরের রেলসেতু দিয়ে ট্রেন কবে চলবে বা পঞ্চাননতলা-চুঁয়াপুর রেল গেটের উপরে উড়ালপুল নির্মাণ কবে তা জানতে পরবর্তী রেল বাজেটের দিকে হা-পিত্যেশ করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই, বলছেন কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy