Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে আনার আগে ব্যান্ডেজ বাঁধল কে, প্রশ্ন

গুলি লেগে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন সজলবাবু। অথচ হাসপাতালের কোথাও, এমনকী যে সাক্ষীরা তাঁকে ধরেছিলেন তাঁদের জামাকাপড়েও রক্তের কোনও চিহ্ন ছিল নাসওয়ালে এমনটাই দাবি করলেন অভিযুক্তের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়। ১০ নভেম্বর, থেকে নবদ্বীপের অতিরিক্ত এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা মামলার শেষ পর্বের শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সওয়ালের পঞ্চম দিনে সজলবাবু হাসপাতালের কোথায় খুন হয়েছিলেন, তা নিয়ে সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও তুলে ধরেন প্রতিমবাবু।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৭
Share: Save:

গুলি লেগে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন সজলবাবু। অথচ হাসপাতালের কোথাও, এমনকী যে সাক্ষীরা তাঁকে ধরেছিলেন তাঁদের জামাকাপড়েও রক্তের কোনও চিহ্ন ছিল নাসওয়ালে এমনটাই দাবি করলেন অভিযুক্তের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়।

১০ নভেম্বর, থেকে নবদ্বীপের অতিরিক্ত এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা মামলার শেষ পর্বের শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সওয়ালের পঞ্চম দিনে সজলবাবু হাসপাতালের কোথায় খুন হয়েছিলেন, তা নিয়ে সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও তুলে ধরেন প্রতিমবাবু। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি এবং জেরার বিভিন্ন অংশ উদ্ধৃত করে প্রতিমবাবু আদালতে জানান, মামলার তৃতীয় সাক্ষী হালিম শেখ বলেছেন সজল ঘোষ ওই রাতে প্রতাপনগরে নবদ্বীপ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে খুন হয়েছিলেন। চতুর্থ সাক্ষী গৌতম নাথ বলেছেন সজলবাবু হাসপাতালের ইমারজেন্সি গেটের সামনে খুন হয়েছিলেন। পঞ্চম সাক্ষী ফজলুল হক মণ্ডলের মতে তিনি হাসপাতালের মেন গেট এবং ইমারজেন্সি গেটের মধ্যে পাকা রাস্তার উপর অ্যাম্বুল্যান্স গ্যারেজের সামনে খুন হয়েছিলেন। আবার ষষ্ঠ সাক্ষী কাজল শেখ বলেছেন হাসপাতালের ইমারজেন্সি গেট এবং অ্যাম্বুল্যান্স গ্যারেজের মাঝখানে সজল ঘোষ খুন হয়েছিলেন। প্রতিমবাবুর দাবি, সাক্ষীরা বানানো গল্প বলতে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেছেন। সজল ঘোষ আদৌ নবদ্বীপ হাসপাতালে খুন হননি।

ওই রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ। তিনি বলেছেন, ক্ষত পরীক্ষা করতে গিয়ে সজলবাবুর বুকের ব্যান্ডেজ খোলেন তিনি। সেখানে গুলির ক্ষত ছিল, তবে কোনও রক্তপাত হচ্ছিল না। প্রতিমবাবু দাবি, সজল ঘোষ যদি হাসপাতাল চত্ত্বরেই খুন হয়ে থাকেন এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার জন্য আনা হয় তাহলে জরুরি বিভাগে আনার আগে ক্ষতে ব্যান্ডেজ বাধল কে? তাঁর আরও দাবি, সজল ঘোষ আগেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তাঁকে অন্য কোথাও চিকিৎসা করিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে নবদ্বীপ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ততক্ষণে ক্ষতস্থানের রক্ত শুকিয়ে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও পোশাকে রক্ত না লাগা, মাটিতে, হাসপাতালের সিঁড়ি, রাস্তা কোথাও রক্তের দাগ না থাকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। সওয়ালে উঠে আসে তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্যও। প্রতিমবাবু বলেন, তদন্তকারী অফিসার বলেছিলেন সজলবাবুরে যে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা থেকে তুলোয় করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। কিন্তু সেই নমুনা তিনি ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়নি। প্রতিমবাবুর সওয়াল, তদন্তকারী অফিসার জানতেন যে পরীক্ষা করালেই ধরা পড়ে যাবে, ওটি অন্য কারও রক্তের নমুনা, তাই তিনি পরীক্ষা করান নি।

প্রতিমবাবু বলেন, নবদ্বীপ হাসপাতালে যাতায়াতের একটাই গেট। সাক্ষীরা বলেছেন ওই রাতে দুটি মোটরবাইকে প্রদীপ সাহা, লোকনাথ দেবনাথ-সহ ছ’জন এসেছিল সজল ঘোষকে খুন করতে। অথচ সাক্ষীদের কেউ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে, কেউ হাসপাতালের মেন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও খুনি গুলি করে বাইকে চড়ে পালিয়ে গেল, কেউ ধরার চেষ্টা করলেন না, চিৎকারও করলেন না? ওই রাতে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরাও কোনও হইচই বা শব্দ শোনেনি নি বলে জানিয়েছিলেন। প্রতিমবাবুর সওয়াল, সবটাই অসম্ভব গল্প। তবে সওয়ালের শেষ ভাবে প্রতিমবাবু যে দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেন, তা হল ময়না-তদন্তের রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে সজল ঘোষের মৃত্যুর কারণ ‘শক অ্যান্ড হেমারেজ’। সাক্ষ্য দিতে এসে ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক অভিজিৎ কুমার বিশ্বাসও বলেছিলেন, কোনও লিখিত নির্দেশ ছাড়াই জেলা হাসপাতালের সুপারের কথায় তিনি বাধ্য হয়েছিলেন ১০-০১-১২ তারিখ সকাল ৮.২৫ মিনিটে সজল ঘোষের দেহের ময়না-তদন্ত করতে। যদিও নিয়ম সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটের মধ্যে উজ্জল দিনের আলোয় ময়না-তদন্ত করতে হবে। প্রতিমবাবু বলেন, তদন্তকারী চিকিৎসক আদালতে বলেছেন ময়না-তদন্তের ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা আগেই সজল ঘোষের মৃত্যু হয়েছিল। হিসেব মতো ৯ তারিখ সন্ধ্যা নাগাদ খুন হন সজলবাবু। প্রতিমবাবুর সওয়াল, এর সহজ মানে সজল ঘোষকে নবদ্বীপ হাসপাতালের বাইরে অন্য কোথাও আগেই খুন করা হয়। তারপরে বিধায়কের গাড়িতে করে তাঁর দেহ এনে মিথ্যা খুনের নাটক তৈরি করা হয়।

মঙ্গলবার ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE