Advertisement
১১ মে ২০২৪
PMAY

Awas Yojana: আবাস যোজনার ফলকে ফিরছে কেন্দ্রের নাম

জেলা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের উপভোক্তার বাড়িতে একটি ফলক লাগানো হয়। তাতে এত দিন বাংলা আবাস যোজনার উল্লেখ থাকত।

বাংলা আবাস যোজনার (বিএওয়াই) জায়গায় নতুন করে লেখা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই)। নিজস্ব চিত্র

বাংলা আবাস যোজনার (বিএওয়াই) জায়গায় নতুন করে লেখা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই)। নিজস্ব চিত্র

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৫:৪৪
Share: Save:

কথায় বলে, নামে কী-ই বা আসে-যায়? কিন্তু প্রকল্পের নাম-দ্বন্দ্ব ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্যের সাম্প্রতিক টানাপড়েন সাক্ষী— নামে সত্যিই আসে-যায়! এতটাই যে, শুধু তার জেরে আটকে যেতে পারে প্রকল্পের বরাদ্দ। এখন সেই দ্বন্দ্বে দাঁড়ি টানতে ‘পুরনো নাম ফিরিয়ে দেওয়াই’ একমাত্র পথ কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। যার মূল কারণ, আবাস প্রকল্প ঘিরে বিভিন্ন জেলায় রাজ্য প্রশাসনের সাম্প্রতিক তৎপরতা।

হিসাব দাখিলে গড়িমসি এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে যেমন একশো দিনের কাজে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ রাখার বিষয়টি চর্চায় উঠে এসেছে, তেমনই গত কয়েক মাসে বিস্তর কথা শোনা গিয়েছে আবাস যোজনায় টাকা আটকে রাখা নিয়ে। মোদী সরকারের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম বদলে বহু জায়গায় বাংলা আবাস যোজনা করেছে রাজ্য। এর বিরুদ্ধে আবার সরব হয়েছে নবান্ন। এই পরিস্থিতিতে আবাস প্রকল্পের নাম বদলের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজ্যে ফের আসছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল। মনে করা হচ্ছে, তাদের রিপোর্টের উপরে প্রকল্পের টাকা পাওয়া বা না-পাওয়া অনেকটা নির্ভর করবে। সূত্রের খবর, লিখিত কোনও সরকারি নির্দেশ না থাকলেও, আবাস প্রকল্পের নামে সম্প্রতি বদল ঘটাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি জেলা প্রশাসনকে। বাংলা আবাস যোজনার (বিএওয়াই) জায়গায় লিখতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই)। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসার আগে বিভিন্ন জেলায় এমন নাম বদলের উদ্যোগ ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনেকরা হচ্ছে।

পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার অবশ্য দাবি, “রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল এসেছে এবং আসবেও। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কারণ, স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজ্যে কাজ হয়। এটি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও রাজ্যে এসে স্বীকার করেছেন। একশো দিনের কাজে রাজ্য অগ্রণী। আবাস যোজনাতেও তা-ই। যোগ্যরাই যাতে প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন, সে দিকে কড়া নজর রয়েছে।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের যুক্তি, একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করা হয়েছে। এ বার আবাস প্রকল্পের টাকাও আটকে। এখন রাজ্যের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে প্রশাসনিক বিধির কারণে এই টাকা পুরোপুরি আটকে গেলে প্রকল্প চালানোর দায়িত্ব নেওয়া মুশকিল। আবার প্রকল্পের কাজ থমকে গেলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সুখকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না। সেই কারণেই সম্ভবত নাম-দ্বন্দ্বে আটকে থাকতে আর রাজি নয় রাজ্য সরকার। সরাসরি মন্তব্য না করলেও নাম বদল প্রসঙ্গে এক কর্তার বক্তব্য, “কাজটাই আসল। প্রকৃত উপভোক্তারা সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই কাজই হচ্ছে এখানে।”

জেলা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের উপভোক্তার বাড়িতে একটি ফলক লাগানো হয়। তাতে এত দিন বাংলা আবাস যোজনার উল্লেখ থাকত। এখন বেশ কয়েকটি জেলায় সেই জায়গায় লেখা হচ্ছে পিএমএওয়াই। এ নিয়ে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের কাছে মৌখিক নির্দেশ পৌঁছেছে। কিছু জেলায় এই কাজ এখনও চললেও, অনেক জেলায় তা শেষের পথে।

সম্প্রতি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, একশো দিনের কাজ এবং আবাস প্রকল্পের কাজ দেখতে রাজ্যের ১৫টি জেলায় ফের পর্যবেক্ষক দল যাবে। এক-একটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন ডিরেক্টর বা উপসচিব স্তরের অফিসার এবং আরও দু’জন আধিকারিক। প্রতি জেলায় সেই সমস্ত দল অন্তত দু’টি ব্লকের চার-ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরবে। একশো দিনের কাজ, সড়ক প্রকল্প ছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও পৃথক ভাবে খতিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। উপভোক্তা প্রকল্পের পুরো টাকা পেয়েছেন, নাকি তা পেতে কাউকে ‘খুশি’ করতে হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে তা-ও। দিল্লি ফিরে ছবি-সহ রিপোর্ট মন্ত্রককে জমা দেব কেন্দ্রীয় দল। ২৫ জুলাই থেকে এই পর্যবেক্ষণ শুরু হবে। শেষ হবে ২২ অগস্ট। এর মধ্যে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, কোচবিহার, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, আলিপুরদুয়ার, পুরুলিয়া, দুই দিনাজপুর, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, কালিম্পংয়ে ঘুরবে পর্যবেক্ষক দলগুলি।

আবাস প্রকল্পে মোট খরচের ৬০% দেয় কেন্দ্র, বাকি ৪০% রাজ্যের। কেন্দ্রের দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল বা ‘কো-ব্র্যান্ডিং’ অর্থ মন্ত্রকের বিধির পরিপন্থী। কয়েক দিন আগেই কলকাতায় এসে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পালিত বলেছিলেন, “সরকারি প্রকল্পে নাম বদল নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্য থেকে অভিযোগ এসেছে। তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।” নতুন করে কেন্দ্রীয় দলের রাজ্যে আসার বার্তার সঙ্গে সেই ‘তদন্তের’ কোথাও না কোথাও সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় দলের লক্ষ্য আগে থেকেই স্থির। নাম বদলের অভিযোগ খতিয়ে দেখাই যে তাদের অন্যতম কাজ, সেই ধারণা সম্ভবত ভ্রান্ত হবে না।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করাচ্ছেন, এত দিন রাজ্যের অবস্থান ছিল কিছুটা ভিন্ন। রাজ্যের যুক্তি ছিল, এক সময় এই প্রকল্পের নাম ছিল ইন্দিরা আবাস। তা বদল করেছে কেন্দ্রই। তা ছাড়া, এই প্রকল্পের জন্য ৪০ ভাগ খরচ দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নের কাজ করে রাজ্য। ফলে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ নামে কোনও অসুবিধা থাকার কথা নয়। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এই প্রকল্পে তো মুখ্যমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়নি। অথবা নিজস্ব প্রকল্পের দাবিও তোলা হয়নি। এ রাজ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পের নামে শুধু বাংলা কথাটা ব্যবহার করা হয়েছিল।” এখন অবশ্য সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত মিলছে জেলা প্রশাসনগুলির তৎপরতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PMAY Pradhan Mantri Awas Yojana Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE