রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে বিএলও-রা যাতে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জেলাশাসকদের দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ৯৯% বিএলও-ই যে ভাল কাজ করছেন, শুক্রবার জেলাশাসকদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে তা জানিয়েছেন কমিশন-কর্তারা। তবে মুষ্টিমেয় কিছু বিএলও-র আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে কমিশনের অন্দরে। এর নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে আইনি পদক্ষেপের বার্তাও স্পষ্ট করেদেওয়া হয়েছে।
সূত্রের দাবি, এই প্রসঙ্গেই আইন মেনে কাজ করতে জেলাশাসকদের ফের সতর্ক করেছে কমিশন। এমনকি, এসআইআরের প্রথম পর্যায়ের কাজ ৪ ডিসেম্বরের মধ্যেই যে শেষ করতে হবে, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও। এ দিন ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রের (ইভিএম-ভিভিপ্যাট) সবিস্তার ব্যাখ্যা জেলাশাসকদের দেন কমিশনের প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা।
গত ৪ নভেম্বর এ রাজ্যে (মোট ১২টি রাজ্যে) শুরু হয়েছে এসআইআরের কাজ। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চলার কথা রয়েছে। তার ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ পাবে খসড়া ভোটার তালিকা। এ দিন পর্যন্ত ৯৯.৭৪% ফর্ম বিলি হয়েছে। তা জমা নিয়ে প্রায় ৩৩% ফর্ম করাহয়েছে ডিজিটাইজ়। এই অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট কমিশন। এই কাজের মূল সৈনিক হিসাবে বিএলও-দের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে এ দিন। সময়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে ভাবে তাঁরা বিপুল চাপ নিয়ে এই কাজ চালাচ্ছেন, তাকে সাধুবাদও দিয়েছে কমিশন। তবে তাদের বার্তা—কিছু সংখ্যক বিএলও-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ, তাঁরা বিধি মেনে কাজ করছেন না। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিএলও-কে বিধিভঙ্গের অভিযোগে শো-কজ় করা হয়েছে। আগামী দিনে এমন পদক্ষেপ যাতে না করতে হয়, সে ব্যাপারে জেলাশাসকদেরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
রাজনৈতিক কোনও প্রভাব বিএলও-দের সমস্যায় যাতে না ফেলে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভোটারদের নথি-যাচাই-শুনানি পর্বে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) এবং সামগ্রিক নজরদারির প্রশ্নে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক হিসাবে জেলাশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন পর্বে তাই তাঁদের উপরেও কমিশন যে নজর রাখবে, তেমন বার্তাই পেয়েছেন আধিকারিকেরা।
ইতিমধ্যেই বিএলও-দের একাংশ কাজের প্রবল চাপ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন। ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে তা নিয়েও।
সূত্রের দাবি, এ দিন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, আপাতত নির্ধারিত ৪ ডিসেম্বরের সময় পিছনোর পরিকল্পনা নেই। ফলে তার মধ্যেই প্রথম পর্বের কাজ শেষ করতে হবে। বিহারের উদাহরণ টেনে কমিশনের যুক্তি, বিহার এবং এ রাজ্যের ভোটার সংখ্যা কাছাকাছি। সেখানে বরং তুলনায় কিছুটা কম সময়েই এসআইআরের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে এখানেও তা করে ফেলতে সমস্যা হবে না। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিয়ে এসআইআর আপাতত স্থগিত করার আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে কমিশনের বার্তা অর্থবহ।
নির্বাচন কমিশনের বিধিঅনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনের ছ’মাস আগে ইভিএমের প্রথম স্তরের যাচাইয়ের কাজ শুরু হয় আনুষ্ঠানিক ভাবে। এ দিন তা-ই করল কমিশন। সেই সূত্রে অনুমান করা হচ্ছে, এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের শুরুতেই রাজ্যে হবে ভোট। আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে জেলায় জেলায় ইভিএম পরীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের কাজ হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)