জেসমিনা মল্লিক। ফাইল চিত্র
সরকারি হাসপাতালে ভুল রক্ত দেওয়ার জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রোগিণী। নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) পাঠিয়ে তাঁর ডায়ালিসিস করানো হচ্ছে। কিন্তু যা চিকিৎসা হচ্ছে তাতে তাঁর বাড়ির লোকজন আশ্বস্ত হতে পারছেন না। যে কর্মীর গাফিলতিতে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছিল, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বুধবার পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ২০ অগস্ট নদিয়া জেলার চাপড়ার এলেমনগর থেকে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা জেসমিনা মল্লিককে কৃষ্ণনগরের হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছিল। রক্তাল্পতা থাকায় পরের দিন, ২১ অগস্ট তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। বেশ কিছুটা রক্ত দেওয়ার পরে তাঁর স্বামী ইমরান মল্লিক খেয়াল করেন যে ‘এ পজ়িটিভ’ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হচ্ছে। রক্তদান বন্ধ করিয়ে হাসপাতালে তিনি জানান, বেসরকারি প্যাথলজি সেন্টার পরীক্ষা করে জানিয়েছিল, জেসমিনার রক্তের গ্রুপ ‘ও পজ়িটিভ’। কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, ঠিক গ্রুপের রক্তই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইমরানের চাপাচাপিতে জেসমিনার রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এবং দেখা যায়, তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘ও পজ়িটিভ’। তাঁকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, ওই রাতেই জেসমিনার গর্ভস্থ শিশুটি মারা যায়। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে দেহটি এনআরএস-এ পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রেফার করা জেসমিনাকে। ভুল রক্ত দেওয়ায় কিডনির ক্ষতি হতে পারে বলে প্রথম দিনেই চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করেছিলেন। হয়েছেও তা-ই। জেসমিনার এখন ডায়লিসিস চলছে। কিন্তু নেফ্রোলজি বিভাগের পরিবর্তে তাঁকে গায়নোকলজি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। ইমরান ফোনে জানান, পরিবারের তরফে এ দিন হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে দেখা করা হয়েছিল। তিনি জানান, নেফ্রোলজি বিভাগে শয্যা না থাকাতেই তাঁকে সেখানে স্থানান্তরিত করা যায়নি। ইমরানের প্রশ্ন, ‘‘ঠিক বিভাগে ভর্তি করা না গেলে ঠিক চিকিৎসা হবে কী করে?’’
‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ দিন এনআরএস-এ গিয়ে জেসমিনার সঙ্গে দেখা করেন। পরে সংগঠনের তরফে মিতা চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘এখানে চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে। সরকারি খরচে ভাল চিকিৎসা এবং রোগিণীর গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ চেয়ে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’’
শক্তিনগর হাসপাতালে রোগিণীকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছিল গত ২৩ অগস্ট। সেন্টু শেখ নামে যে মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এর জন্য দায়ী, তাঁকে ২৬ অগস্ট শো-কজ করা হয়। কিন্তু এ দিন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সে দিনের পর থেকে সেন্টু হাসপাতালে আসছেনও না।
নদিয়া জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, পদ্ধতিগত জটিলতার কারণেই চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কেননা সেন্টু ব্লাড ব্যাঙ্কের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী নয়। তাঁকে নিয়োগ করেছে ডিস্ট্রিক্ট হেল্থ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সমিতি। জেলাশাসক সেটির এগজ়িকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান। সেই কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন চেয়ে তাঁর কাছে এ দিন ফাইল পাঠানো হয়েছে। গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় সেন্টুকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। আইনি পদক্ষেপ করা যায় কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের পরামর্শমতো পদক্ষেপ করা হবে।
নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাতে জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘এখনও আমার হাতে রিপোর্ট আসেনি। এলেই দরকার মতো পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy