Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুরের খসড়া বিধি

সংযোজন তাঁর নয়, জানালেন আচার্য

অবশেষে সত্যিটা জানিয়েই দিলেন আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিধিতে যে সংযোজনগুলি করা হয়েছে, সেগুলি যে তাঁর প্রস্তাব নয়, উচ্চশিক্ষা দফতরের, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এ দিন সেরামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হলে ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘রাজভবন থেকে এমন কোনও প্রস্তাব যায়নি। রাজ্য সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সংযোজনগুলি প্রস্তাব করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ই।’’

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

অবশেষে সত্যিটা জানিয়েই দিলেন আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিধিতে যে সংযোজনগুলি করা হয়েছে, সেগুলি যে তাঁর প্রস্তাব নয়, উচ্চশিক্ষা দফতরের, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এ দিন সেরামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হলে ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘রাজভবন থেকে এমন কোনও প্রস্তাব যায়নি। রাজ্য সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সংযোজনগুলি প্রস্তাব করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ই।’’

বিধানসভায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হওয়ার পরে ২০১৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সংশোধিত বিধির খসড়া আচার্যের দফতরে পাঠায়। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পদাধিকার বলে আচার্যের সচিব। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর কাছেই পাঠানো হয় খসড়া বিধিটি। দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, নতুন আইনের সঙ্গে সংশোধিত বিধির সামঞ্জস্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সেটিকে দফতরের আইন বিভাগের কাছে পাঠানো হয়।

বিধিতে কিছু সংযোজন ও পরিমার্জন করে দিন কয়েক আগে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে আচার্যের দফতর। সেই সংযোজনে বলা হয়েছে, কোনও শিক্ষক, আধিকারিক বা শিক্ষাকর্মী সংবাদমাধ্যমে সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে গণ্য করা হবে। আরও বলা হয়েছে, কোনও কাজ বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্য সরকারের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তির প্রস্তাবও করা হয়েছে ওই সংযোজনে। এ ছাড়া, ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকদের অনৈতিক এবং অশালীন কাজকর্মের উপর নজরদারি চালানোর কথাও বলা হয়েছে।

এই সব প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। শিক্ষক, অশিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের অভিযোগ, এই ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এই সব সংযোজনের প্রস্তাব তাঁর দেওয়া নয়, এ কথা জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আচার্য এ-ও বলেছেন যে, ‘‘আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হিতকর প্রস্তাব গ্রহণ করাই যেতে পারে। কোনটা হিতকর তা বিশ্ববিদ্যালয়ই ঠিক করবে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটার সভানেত্রী নীলাজ্ঞনা গুপ্তর বক্তব্য, ‘‘আচার্য নিজেই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। কোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হিতকর তা ওঁরও বোঝা উচিত। রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’’ আজ, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জুটার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সরকারের ভূমিকার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৈঠকে। প্রস্তাবিত বিধির বিরোধিতা করে ১৬ অগস্ট কর্মবিরতি পালন করবে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (আবুটা)। আবুটার যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘সরকার শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ব্যক্তি শিক্ষকদেরও স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আমরা এর বিরোধিতা করি। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মত চাইতে এই খসড়া বিধি পাঠিয়েছে। আমরা কর্মসমিতির কাছে আবেদন রাখি যেন তাদের মতামত সরকারের সংযোজনের বিপক্ষে যায়।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু সরকারের এই হস্তক্ষেপকে কালা কানুন বলেই মনে করছেন। তাঁর কথায় ‘‘এমনটা নিয়ম তো কখনও শুনিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সরকার সহ্য করতে পারছে না বলেই গায়ের জোরে এই বিধি বদল করছে। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ যে কী ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তার আভাস পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

keshri nath tripathi JU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE