সংবাদমাধ্যমে যতই বিরূপ সমালোচনা হোক, তাঁর রাজ্য শিল্পে এক নম্বর হবেই! এই দাবিটুকুর বাইরে শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস পাওয়া গেল না ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর নিষ্প্রভ বক্তব্যে হতাশ শিল্প ও বণিক মহলের বড় অংশই।
রাজ্যের শিল্পায়নের উপরে যে কালো ছায়া নেমে এসেছে, তার সবটাকেই প্রায় অপপ্রচার বলে দেখানোর চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তাঁর মন্তব্য, “মিথ্যে কথা বলে, নাটক করলেও বাংলা শিল্পে এক নম্বরে যাবে! আমাকে কারও পছন্দ না হতেই পারে। কিন্তু বাংলাকে অপমান করবেন না।” তাঁর আমলে শিল্পে কী ভাবে উন্নতি হয়েছে বাংলার, যে কোনও অনুষ্ঠানে সুযোগ পেলেই তার ফিরিস্তি দিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। ক’দিন আগেই শালবনিতে সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করতে গিয়ে রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে উচ্চ কণ্ঠে দাবি করেছিলেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সময়ে শিল্প না-হলে জমি ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এ দিন কিন্তু শিল্প প্রসঙ্গে বলতে হয় তাই বলা গোছের মন্তব্য ছিল মমতার গলায়।
অথচ বলার প্রেক্ষাপট যে ছিল না এমন নয়। ক’দিন আগেই জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল গোষ্ঠীর কাছ থেকে তোলা চাওয়া এবং অফিসারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। দুই নেতাকে সাসপেন্ড করেও সেই ঘটনাকে ইতিমধ্যেই ‘ছোট ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন মমতা। কিন্তু জামুড়িয়ার সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও উল্লেখই এ দিন তাঁর বক্তৃতায় আসেনি। আসেনি ডানলপ, জেশপ, হিন্দ মোটর বা অতি সম্প্রতি শালিমার কারখানা বন্ধ হওয়ার প্রসঙ্গও। রাজ্যের নানা প্রান্তে ছোট বা মাঝারি কারখানায় অশান্তি বাধানোর যে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লাগাতার উঠছে, তা নিয়েও এ দিন নীরব ছিলেন মমতা। তবে বারেবারেই দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, টাকা তোলা চলবে না।
শিল্প ও বণিক মহলের অভিযোগ, শাসক দলের তোলাবাজি-সহ আরও কিছু কাজকর্ম ঘিরে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হয়ে উঠছে। নতুন শিল্প আসা তো দূরের কথা, চালু শিল্প ধরে রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন আশ্বাসই এ দিন শুনতে চেয়েছিলেন লগ্নিকারীরা। সভা শেষে হতাশ বণিকসভার এক কর্তার কথায়, “শিল্প নিয়ে বিশেষ কোনও আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর কথায় পাওয়া গেল না। টাকা না নেওয়ার কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু দলের বিশৃঙ্খল আচরণ যাতে শিল্পের ক্ষতি না করে, তার জন্য যা করণীয় তিনি করবেন এই স্পষ্ট কথাটা তিনি বলেননি।” মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা না দেওয়ায় শিল্প ক্ষেত্রে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আসা কঠিন বলেই মনে করছে শিল্প ও বণিক মহলের একাংশ।
জমি নীতি নিয়ে মমতা মুখ না-খোলাতেও হতাশ শিল্প মহল। তাদের মতে, সরকার একেবারে হাত গুটিয়ে থাকলে পশ্চিমবঙ্গের মতো বহুখণ্ডিত জমির রাজ্যে শিল্পের জন্য জমি পাওয়া যে কার্যত অসম্ভব, সেটা না-বুঝলে শিল্পায়নের পথে প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতাটাই দূর হবে না। কিন্তু মমতা কিছু না-বললেও লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলে দিয়েছেন, “সিঙ্গুর স্টাইলে বা নন্দীগ্রাম মডেলে আমরা জমি অধিগ্রহণ করব না। আমাদের নীতি হল, যিনি শিল্প করতে চাইবেন এবং যিনি জমির মালিক, তাঁরা আলোচনা করে দাম ঠিক করবেন। জমির দালালি করা সরকারের কাজ নয়। কোনও শিল্পপতি শিল্প করতে চেয়েছেন বলে কৃষকের পেটে লাথি মেরে জমি নিতে হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy