E-Paper

বিজয়গড়ে মারধরে মৃত্যুর ঘটনায় রয়েছে সিসি ক্যামেরার ছবি, তবু ধরা পড়েনি অভিযুক্তেরা

বিজয়গড়ের ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়েরের পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। স্থানীয়দের প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরায় মারধরের ফুটেজ মিললেও এখনও কেন অধরা অভিযুক্তেরা?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ০৯:০২
নিহত যুবকের নাম জয়ন্ত সেন।

নিহত যুবকের নাম জয়ন্ত সেন। ছবি: সংগৃহীত।

গাড়ি রাখতে গিয়ে ধাক্কা লেগেছিল স্কুটারে। এই ‘অপরাধে’ গাড়িচালক যুবককে মধ্য রাতে বাড়ি থেকে বার করে এনে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে। দিন দুয়েক আগে যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ের ওই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়েরের পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। স্থানীয়দের প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরায় মারধরের ফুটেজ মিললেও এখনও কেন অধরা অভিযুক্তেরা?

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম জয়ন্ত সেন। বছর ছত্রিশের জয়ন্ত বিজয়গড়ের শ্রী কলোনিতে থাকতেন। পেশায় অ্যাপ-ক্যাব চালক ওই যুবক ছিলেন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে। বছর পনেরো ধরে কলোনির একতলার একটি ঘরে সপরিবার ভাড়া ছিলেন তিনি। বাড়িতে আছেন মা, ভাই, স্ত্রী এবং দু’বছরের সন্তান।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতোই বুধবার রাত ১১টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে ফেরেন জয়ন্ত। নিজেদের ভাড়া বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় গাড়ি রাখতেন তিনি। সেই রাতে সেখানে গাড়ি রাখতে গেলে আগে থেকে রাখা একটি স্কুটারে ধাক্কা লাগে। গাড়ির ধাক্কায় স্কুটারটি কাত হয়ে পড়ে যায়। এর পরে জয়ন্ত গাড়ি রেখে বাড়িতে ঢুকে যান।

অভিযোগ, বিষয়টি জানতে পেরে রাত ২টো নাগাদ পাঁচ অভিযুক্ত যুবক জয়ন্তের বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ি থেকে তাঁকে বার করে এনে মুখে গামছা বেঁধে চলে কিল-চড় ঘুষি। বৃদ্ধা মায়ের সামনেই যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়। মা, ভাই-সহ পরিজনেরা কাকুতি-মিনতি করলেও তাঁদের সামনেই মিনিট দশেক ধরে চলে মারধর। ঘটনাস্থলের একটি সিসি ক্যামেরায় মারধরের দৃশ্য মিলেছে। প্রত্যেকে মত্ত অবস্থায় ছিল বলেও অভিযোগ।

ভোরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবক। দ্রুত তাঁকে বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে যাদবপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্তদের সবাইকে চেনা না গেলেও এক জন স্থানীয় যুবক। যদিও ঘটনার পর থেকে কারও খোঁজ নেই। জয়ন্তের মৃত্যুর খবর এলাকায় আসতেই রাস্তায় রাখা অভিযুক্ত এক যুবকের গাড়ি ভাঙচুর করেন স্থানীয়েরা। মৃতের ভাই প্রশান্ত সেন বলেন, ‘‘আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক। আমরা সে দিন ওদের হাতে-পায়ে ধরেছিলাম। কিন্তু রাস্তায় ফেলে লাথি, কিল, চড়, ঘুষি মারছিল। চিকিৎসকেরা বলেছেন শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে দাদার।’’

স্থানীয় এক বাসিন্দা সুরজিৎ ঘোষ জানান, রাত ১২টার পর থেকে ওই পাঁচ জন এলাকায় ঘুরছিল। তখন পাড়ার অনেকে জেগে ছিলেন। কিছু সময় পরে তারা চলে যায়। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তখন ওরা ফের আসে। সুরজিতের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে অধিকাংশের গাড়ি রাস্তায় থাকে। বাইরের কয়েক জনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে বাড়ির বারান্দায় বসে নজর রাখছিলাম। ওরা চলে যাওয়ায় ঘরে ঢুকে যাই। সকালে উঠে মারধরের কথা শুনতে পাই।’’

শুক্রবার বিকেলে মৃতের পরিবারের সদস্যেরা যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে যুবকদের দেখা গেলেও কেন গ্রেফতার করা হল না? সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bijay garh police investigation Murder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy