Advertisement
E-Paper

সুচেতার মৃত্যুর খবর এখনও জানানো হয়নি তাঁর দিদিমাকে

রক্ত দেখতে পারতেন না, ছোটবেলায় তাই তাঁর চোখের সামনে মাছও কাটতেন না মা-মাসিরা। মাছের রক্ত দেখলেও ভয়ে সিঁটিয়ে যেত ছোট মেয়েটা। সেই সুচেতাকেও খুন করে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়েছে, ভাবতেও শিউরে উঠছেন মামা বাড়ির লোকজন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪৮
বিয়ের সাজে সুচেতা। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে।

বিয়ের সাজে সুচেতা। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে।

রক্ত দেখতে পারতেন না, ছোটবেলায় তাই তাঁর চোখের সামনে মাছও কাটতেন না মা-মাসিরা। মাছের রক্ত দেখলেও ভয়ে সিঁটিয়ে যেত ছোট মেয়েটা। সেই সুচেতাকেও খুন করে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়েছে, ভাবতেও শিউরে উঠছেন মামা বাড়ির লোকজন।

সুচেতার কথা বলতে গিয়ে বারবারই ভেঙে পড়ছিলেন মামন ওরফে সুচেতা চক্রবর্তীর ছোট মাসি সুনীপা পাঠক। সুচেতাদেবীর থেকে পাঁচ বছরের বড় তিনি। মঙ্গলবার সকালে বনগাঁর ট’বাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসে মামনের সম্পর্কে জানালেন, ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সুচেতা লেখাপড়া নিয়েই থাকতে ভালবাসতেন। ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময়টাই তাঁর বনগাঁর কলেজপাড়ায় মামাবাড়িতে কেটেছে। সুনীপাদেবী বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ বোন ও তিন ভাই। বড়দি দীপালির একমাত্র মেয়ে সুচেতা। কোনও সময়ে খেলতে গিয়ে সুচেতা পড়ে গিয়ে সামান্য চোট পেলেই আমরা অস্থির হয়ে যেতাম। আর তাঁকে এ ভাবে খুন করা হল।’’ সুচেতার দাদু বিনয়রঞ্জনবাবু মারা গিয়েছেন। আছেন বৃদ্ধা দিদিমা রমারানিদেবী। নাতনির খুনের কথা এখনও জানানোই হয়নি তাঁকে।

পারিবারিক অ্যালবামে সুচেতার বিয়ের ছবি রয়েছে। রয়েছে তাঁর স্বামী শ্রুতিধর ও মেয়ে দীপাঞ্জনার ছবিও। অ্যালবাম দেখাতে দেখাতে সুনীপা বললেন, ‘‘সুচেতা নরম স্বভাবের। চাপা মনের মেয়ে। নিজেকে সব সময়ে গুটিয়ে রাখত।’’

সুনীপাদেবীর সঙ্গে অবশ্য দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল না সুচেতার। শেষবার দেখা হয়েছিল গত বছর দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে। সেখানে সুনীপাদেবীর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সুচেতা দেখতে গিয়েছিলেন মাসিকে। সুনীপাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে অশোকনগরের ৮ নম্বর কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ়া রিনা চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। রিনাদেবী তাঁর মেজো মাসি। দু’মাস আগেও সুচেতা মেয়েকে নিয়ে সেখান থেকে ঘুরে গিয়েছেন। রিনাদেবী বলেন, ‘‘এই তো সে দিনই ঘুরে গেল মেয়েকে নিয়ে। কত আনন্দ করল। কিন্তু কোনও সমস্যার কথা জানায়নি।’’ মেজো মাসির বাড়ি এসেছিলেন মেসো দীপেশবাবুকে দেখতে। তিনি কিডনির অসুখে ভুগছেন। বললেন, ‘‘সুচেতাকে মেয়ের মতোই স্নেহ করতাম। ওর বাচ্চাটাও ক’দিন আগে বাড়িতে এল। ভাবতেই পারছি না, ওরা আর নেই।’’

সুচেতার মতো নির্বিবাদী মেয়েকে কেউ খুন করতে পারে, তা-ও এমন নৃশংস ভাবে— তা যেন এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না মামা বাড়ির লোকজনের। এলাকার মানুষের কাছেও অবিশ্বাস্য ঠেকছে সব কিছু। বিয়ের পরে স্বামীকে নিয়ে একবারই সুচেতা মামার বাড়িতে এসেছিলেন। প্রতিমা রুদ্র নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে এলেই আমার বাড়িতে খেলতে আসত সুচেতা। শনিবার টিভিতে খবরটা দেখেছিলাম। প্রথমে দেখে তো নিজের চোখ-কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’’ বললেন, ‘‘পড়াশোনা ছাড়া ওকে তো আর কিছু নিয়ে কখনও থাকতে দেখিনি। ওকে খুন করা হয়েছে ভাবতেই পারছি না।’’

শনিবারই এক আত্মীয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন সুচেতার মেজো মামা প্রভাত পাঠক। এ দিন বললেন, ‘‘শ্রীরামপুর থানায় এক পুলিশ অফিসারের কাছে ভাগ্নির হাতে থাকা পলার ছবি দেখেই চিনতে পারি।’’

প্রভাতবাবু মনে করেছেন, সম্পত্তির লোভেই সুচেতাকে খুন করা হয়েছে। ব্যাঙ্কে তাঁর লকারে প্রচুর সোনাদানা ছিল। এখন কিছুই নেই। শ্রুতিধরবাবুর সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতের জন্য সুচেতার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বলেও তিনি মনে করেন। প্রভাতবাবুর অনুমান, সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন সমরেশ সরকার। খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান সকলেই।

sucheta grandmother sucheta murder mystery sucheta murder sucheta murder news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy