শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর কেটে গিয়েছে সাড়ে পাঁচ মাস। দিন কয়েক পরেই শুরু হবে গরমের ছুটি। কিন্তু এখনও মালদহ জেলার প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি স্কুলের পাঁচ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া পোশাক পায়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের।
জানা গিয়েছে, পোশাক বিলির ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা নিয়ে চলছে চাপানউতোর। জেলার শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনের ডিরেক্টর স্কুলগুলিকেই পোশাক কেনার দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ পাঠালেও জেলা প্রশাসন তা কার্যকর না করে উল্টো তন্তুজ ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দিয়ে পোশাক সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। তার জেরেই এই দেরি।
প্রতি বছর মালদহ জেলার প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পোশাক তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় স্কুলগুলিকে। গত বছর জেলার কিছু স্বর্নিভর গোষ্ঠীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের সরবরাহ করা পোশাক নিম্নমানের বলে অভিযোগ ওঠে। তাই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলের কিছু স্কুলে গোলমালও হয়। এ বার জেলার ৩১টি সার্কেলের ১৯৮৮ টি প্রাইমারি স্কুল ও কিছু আপার প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীর পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয় তন্তুজকে। বাকি আপার প্রাইমারিগুলির বরাত পায় জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী। মার্চ মাসের শেষে ওই বরাত দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সর্বশিক্ষা মিশন)। তা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ও অভিযোগ তুলেছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
এদিকে সর্বশিক্ষা মিশনের রাজ্য ডিরেক্টর গত ৫ মে এক নির্দেশে মালদহ জেলাশাসককে পোশাক তৈরির বরাত বাতিল করার কথা জানান। চিঠিতে তিনি সাফ জানিয়েছেন, মিশনের নিয়ম ও গাইডলাইন অনুয়ায়ী জেলা বা ব্লক প্রশাসন কেন্দ্রীয়ভাবে পোশাক কিনতে পারে না। স্কুলই পোশাক কিনবে ও বিলি করবে। অভিযোগ, ওই নির্দেশ এলেও জেলা প্রশাসন এখনও তা কার্যকর করছে না। বরং বিভিন্ন সার্কেলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতোই সেই পোশাক পাঠানো হচ্ছে। যদিও পোশাক বিলি হয়নি। ফলে জেলার পাঁচ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া এখনও পোশাক পায়নি। শিক্ষকরাই জানিয়েছেন, গত বছর বেশিরভাগ স্কুলেই পড়ুয়ারা এপ্রিল মাসের শেষে ও মে মাসের শুরুতে পোশাক পেয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশন থেকে বরাত বাতিল করার নির্দেশ আসার পরেও কেন জেলা প্রশাসন তাঁদের সিদ্ধান্ত বজায় রাখছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এর পেছনে অভিসন্ধি কী রয়েছে তা সামনে আসা উচিত।’’ তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আইনুল হক বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ জেলা কেন কার্যকর করছে না তা নিয়ে আমরাও বিস্মিত।’’মালদহের জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের স্বার্থে তাদের দিয়ে পোশাক তৈরি করার জন্য ২০১২ সালে একটি সরকারি নির্দেশ ছিল। সেই অনুযায়ীই আমরা ব্যবস্থাই করেছি। এখন কী করা হবে তা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানছি।’’