বন্যপ্রাণী চলাচলের ‘করিডর’ জাতীয় সড়কের ওই অংশটি। রাস্তার ধারে ঝোলানো বড় বোর্ডেও রয়েছে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ। তার পরেও মালবাজার মহকুমার নাগরাকাটা ব্লকের পানঝোরা বনাঞ্চলের মধ্যবর্তী ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে শুক্রবার সকালে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল একটি বাইসনের। পুরুষ বাইসনটির বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেছেন, ‘‘বাইসনের মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, গাড়িটি খুব দ্রুত বেগে চলছিল। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ গাড়ির চালক ইসানুল মিয়াঁ যদিও দাবি করেন, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। হঠাৎ কিছু বোঝার আগেই জঙ্গলের ভিতর থেকে বাইসনটি বেরিয়ে এসে গাড়িটিতে জোরে ধাক্কা মারে। নাগরাকাটা থানার পুলিশও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে খুনিয়া মোড়ের কাছে পানঝোরা বনাঞ্চলে জাতীয় সড়কের উপরে ঘটে এই ঘটনা। ওই ছোট গাড়িটি বানারহাটের রিয়াবাড়ি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় বনাঞ্চলের জাতীয় সড়কের উপরে চলে আসা একটি বাইসনকে ধাক্কা মারে সেটি। গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে জাতীয় সড়কের উপরেই বাইসনটির মৃত্যু হয়।
ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই জলপাইগুড়ি বন বিভাগের চালসা রেঞ্জ, গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের খুনিয়া স্কোয়াড, নাগরাকাটা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। চালসা রেঞ্জের এক আধিকারিক জানান, বন্যপ্রাণ প্রতিরক্ষা আইন মোতাবেক মামলা রুজু করা হবে। ওই এলাকায় যানবাহনের চলাচলের গতি ৪০ চল্লিশ কিলোমিটারের নীচে রাখার নির্দেশ রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, গাড়িটির গতি চল্লিশ কিলোমিটারের বেশি ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বন দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নাগরাকাটা বনাঞ্চলে মৃত বাইসনটির ময়না-তদন্ত হয়েছে। কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতাতেও পাঠানো হচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে মানব ও বন্যপ্রাণী সংঘর্ষ নিয়ে ফের উদ্বেগ প্রকাশ করছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। কিছু দিন আগেও ডুয়ার্সের আপালচাঁদ বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা অসুস্থ একটি হাতিকে ‘আর্থ মুভার’ দিয়ে ধাক্কা মেরে উত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। সেই হাতিটির খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও। বাইসনের মৃত্যুর ঘটনায় চালসার পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘নেচার স্টাডি অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি’-র সম্পাদক মানবেন্দ্র দে সরকার বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়, ছোট গাড়িটি খুব দ্রুত গতিতে চলছিল। এলাকাটি বন্যপ্রাণ চলাচলের করিডর। সেই বোর্ডও লাগানো ছিল। তার পরেও কী ভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘‘আমাদের এই এলাকায় প্রচুর বন্যপ্রাণী আছে। তাদের রক্ষা করতে হবে। বনাঞ্চলের ভিতরে কখনওই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর যাবে না।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় জখম গাড়ি চালক ইসানুল মিয়াঁকে (৩৪) মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাড়ির যাত্রী অবশ্য জখম হননি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)