হস্টেলে বন্ধ ঘর থেকে লাগাতার শোনা যাচ্ছিল ‘অ্যালার্ম’। কিন্তু বহু ডাকাডাকিতেও সাড়া দিচ্ছিলেন না সে ঘরের আবাসিক ইন্টার্ন। দরজার ফুটো দিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভিতরে তাঁর দেহ ঝুলছে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেল থেকে বুধবার রাতে বিহারের বারাউনি জেলার বাসিন্দা কিষাণ কুমারের (২৮) দেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।
মৃতের বাবার দাবি, তাঁর ছেলেকে ‘মানসিক নির্যাতন’ করা হয়েছে। তবে সে এই নির্যাতনের পিছনে কলেজের ভূমিকা আছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগও করেনি পরিবার। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই ইন্টার্ন প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজের নার্সিং স্টাফদের জন্য তৈরি একটি হস্টেলে ইনটার্নদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তিন তলার ৩০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন কিষাণ। বুধবার রাতে ভিতর থেকে বন্ধ করা ওই ঘরে এক টানা ‘অ্যার্লাম’ শোনা যাচ্ছিল। তা শুনে এক সহকর্মী ডাকাডাকি করেন কিষাণকে। সাড়া না মেলায় দরজার একটি ফুটো দিয়ে আলো ফেলে ওই ছাত্রকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পড়ুয়ারাই কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে পৌঁছয় মৃতের পরিবার। ছাত্রের বাবা জীবস দাশের দাবি, “ছেলের উপরে মানসিক নির্যাতন হয়েছে। ও খুব সাহসী ছিল। নির্যাতন অবশ্যই হয়েছে, না হলে এমন করতে পারে না।” পরিবারের দাবি, বুধবার রাতেও মা-বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন কিষাণ। তখনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি।
আর জি কর কাণ্ডের পরে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে স্বাস্থ্য-শিক্ষায় প্রভাবশালী চিকিৎসক গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাবের কথা উঠে আসে। অভিযোগ ওঠে, কোচবিহার মেডিক্যালেও ‘হুমকি-প্রথা’ চালাত এই গোষ্ঠী। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডল অবশ্য বলেন, “ওই ইনটার্নের থেকে কখনও অভিযোগ পাইনি। জুলাইয়ে ইন্টার্নশিপ শেষ হত। এখানেই ময়না তদন্তের ব্যবস্থা হয়েছে।”
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, হস্টেলের ওই ঘর থেকে ‘সুইসাইড নোট’ এবং মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন ওই ছাত্র।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)