E-Paper

‘ছাদে বিমান ভেঙে পড়েছে’, বাড়িতে ফোন অভ্রজ্যোতির

জলপাইগুড়ির কদমতলার বাড়িতে অভ্রজ্যোতির মা মহুয়ার চোখে তখন যেন এক রাশ অন্ধকার। তড়িঘড়ি টিভি খুলে ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি। ছেলে যে আবাসনে থাকেন, তা কার্যত দুমড়ে দিয়েছে বিমান।

অর্জুন ভট্টাচার্য  

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ০৭:৪১
অভ্রজ্যোতি বিশ্বাস।

অভ্রজ্যোতি বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলেছিলেন তিনি: “মা, আমাদের ছাদে বিমান ভেঙে পড়েছে। টিভি দেখো। আমি ঠিক আছি।” এই ক’টা কথা বলেই ফোন কেটে দিয়েছিলেন অভ্রজ্যোতি বিশ্বাস। গুজরাতের আমদাবাদে তাঁর চোখের সামনে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে মেডিক্যাল কলেজের আবাসন। সেখানে আছড়ে পড়েছে বিশাল বোয়িং বিমান।

জলপাইগুড়ির কদমতলার বাড়িতে অভ্রজ্যোতির মা মহুয়ার চোখে তখন যেন এক রাশ অন্ধকার। তড়িঘড়ি টিভি খুলে ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি। ছেলে যে আবাসনে থাকেন, তা কার্যত দুমড়ে দিয়েছে বিমান। আগুনে আকাশ লাল, পাক খেয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। দেখে কেঁদে ফেলেন মহুয়া।

গুজরাতে বিমান দুর্ঘটনার পরে তিন দিন কাটলেও, আতঙ্ক কাটেনি জলপাইগুড়ির কদমতলার বেসরকারি আবাসনে বিশ্বাস পরিবারে। আমদাবাদ থেকে ফোনে অভ্রজ্যোতির গলায় রবিবারও ছিল আতঙ্কের আঁচ। তাঁর বাবা জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক, হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ বরুণ বিশ্বাস। ছেলে ডাক্তারি পড়েছেন আমদাবাদের বি জে মেডিক্যাল কলেজে। প্রায় সাড়ে চার বছর সেখানকার আবাসনেই আছেন অভ্রজ্যোতি। এখন ওই মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদিত ইউএন মেহেতা কার্ডিয়োলজি হাসপাতালের সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসক তিনি।

অভ্রজ্যোতি জানান, বৃহস্পতিবার বিমান দুর্ঘটনার দিন সকালে হাসপাতালে তাঁর ডিউটি ছিল। সকাল ৯টা নাগাদ আবাসন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে হাসপাতালে চলে যান। কাজ করার ফাঁকেই কানফাটা আওয়াজ পান। খবর পান, তাঁদের আবাসনে বিমান ভেঙে পড়েছে। দৌড়ে সেখানে পৌঁছন অভ্রজ্যোতি। রবিবার ফোনে তিনি বলেন, “সে কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য! দাউদাউ করে জ্বলছে তুবড়ে যাওয়া আমাদের আবাসন। মাটিতে চারপাশে পোড়া দেহ, দেহাংশ ছড়িয়ে। প্রচণ্ড তাপে কালচে রক্তের দাগও।”

এমন খবরে জলপাইগুড়িতে থাকা মা-বাবা, চণ্ডীগড়ে থাকা চিকিৎসক স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন ভেবে, তাঁদের ফোন করেন। বেশি কথা বলতে পারেননি। জানান, আবাসনে ঘরের ভিতরে ছিল তাঁর যাবতীয় নথিপত্র। দুর্ঘটনার কিছু পরে কোনও ভাবে ঘরে ঢুকে দেখেন, চারপাশ ঘন ধোঁয়ায় ভরা। নথিপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

সহকারী শিক্ষক-চিকিৎসক পদে যোগ দেওয়ার পরেই অভ্রজ্যোতির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলাদা আবাসন বরাদ্দ করেছিলেন। তবু পুরনো ওই আবাসনের ঘর ছেড়ে যেতে চাননি তিনি। এ দিন অভ্রজ্যোতি বলেন, “সে দিনের কথা আর বলতে চাই না। ভয়ঙ্কর ওই স্মৃতি ভুলতে চাই।” তাঁর বাবা বরুণ বিশ্বাস বলেন, “ভাগিস্য সে দিন সকালে ছেলের হাসপাতালে ডিউটি ছিল। তাইরক্ষা পেল!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ahmedabad Plane Crash plane accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy