Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Hindu

১৫ বছর পর মাসুদের হাত ধরে বাড়ি ফিরবেন বিহারের শম্ভু

‘কখনও এ ভাবে সযত্নে পাত পেড়ে কেউ খাইয়েছে?’—প্রশ্ন শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন প্রৌঢ় শম্ভু বৈঠা। চোখের কোণ ভিজে যায়। কারণ ১৫ বছর ধরে পথই ছিল শম্ভুর ঠিকানা। জানা গেল, মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বিহারের সমস্তিপুরের ওই প্রৌঢ়। 

পাশে: মাসুদের বাড়িতে শম্ভু। নিজস্ব চিত্র

পাশে: মাসুদের বাড়িতে শম্ভু। নিজস্ব চিত্র

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৩
Share: Save:

গলায় ঝোলানো পৈতে। ঈশ্বরকে প্রণাম করে খেতে শুরু করলেন প্রৌঢ়। বাড়ির দাওয়ায় পাশে বসিয়ে সযত্নে যিনি তাঁকে খাওয়াচ্ছেন তাঁর নাম মাসুদ আলম।

‘কখনও এ ভাবে সযত্নে পাত পেড়ে কেউ খাইয়েছে?’—প্রশ্ন শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন প্রৌঢ় শম্ভু বৈঠা। চোখের কোণ ভিজে যায়। কারণ ১৫ বছর ধরে পথই ছিল শম্ভুর ঠিকানা। জানা গেল, মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বিহারের সমস্তিপুরের ওই প্রৌঢ়।

হরিশ্চন্দ্রপুরের নিয়ার গোপালপুরের বাসিন্দা মাসুদের কথায়, ‘‘চেহারা, পোশাক দেখে সকলে পাগল ভাবলেও ওঁর চোখের চাহনি দেখে আমার তা মনে হয়নি। পাঁচ দিন আগে ওঁকে বাড়ি নিয়ে আসি।’’

মাসুদের কথায়, সোমবার রাতে এলাকারই একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন শম্ভু। অচেনা ব্যক্তি, পাশাপাশি কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় বাসিন্দারা স্থানীয় এক পুলিশ কর্মীকে ফোন করেন। তিনি এলেও শম্ভুকে দেখেই বলেন, ‘‘এ তো পাগল। এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই ঘুরছে।’’

তখনই সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় সব শোনেন মাসুদ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁকে দেখেই আমার মনে হয় উনি কিছু বলতে চান। এরপরই বাড়িতে নিয়ে আসি। পাশে দাঁড়ান প্রতিবেশী মনসুর আলমও।’’

দিন তিনেক পর উনি নিজের নাম, ঠিকানা বলেন। আর সে সব খোঁজ নিয়েই তাঁর গ্রাম গৌরী মোহনপুরের এক ব্যক্তির ফোন নম্বর জোগাড় হয়। কিন্তু সেখানে আবার ফোন করে জানা যায় যে, ওই প্রৌঢ়ের পরিবারটি দীর্ঘদিন আগেই ওই গ্রাম ছেড়ে রাঁচিতে চলে গিয়েছে। পরে ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই যোগাযোগ হয় প্রৌঢ়ের স্ত্রী সুনীতাদেবীর সঙ্গে।

বর্তমানে রাঁচির বাসিন্দা পেশায় নার্স সুনীতা বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে অনেক খুঁজেছি। এ ভাবে যে ওকে খুঁজে পাব ভাবতেই পারছি না। ছেলে আর ভাসুরকে হরিশ্চন্দ্রপুরে পাঠাচ্ছি।’’

আর মাসুদ বলেন, ‘‘মানুষ হিসেবে তো এটুকু করা তো আমাদের কর্তব্য। তবে এত সহজে যে প্রৌঢ়ের পরিবারের হদিশ পাব সেটা সত্যিই কখনও ভাবিনি। এখন শুধু একটাই অপেক্ষা, কবে উনি ভাল ভাবে বাড়ি ফিরবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hindu Musilm Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE