Advertisement
E-Paper

গুলি ছুড়ে শুরু হয় পুজো

জমিদারি লোপ পেয়েছে বহুদিন হল। কিন্তু জমিদারি মেজাজ রয়ে গিয়েছে। তাই পুরানো ঐতিহ্য মেনে আজও শূন্যে ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে সূচনা হয় তিলাসনের জমিদারবাড়ির পুজোর।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৬
রায়বাড়ির সাবেক প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

রায়বাড়ির সাবেক প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

জমিদারি লোপ পেয়েছে বহুদিন হল। কিন্তু জমিদারি মেজাজ রয়ে গিয়েছে। তাই পুরানো ঐতিহ্য মেনে আজও শূন্যে ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে সূচনা হয় তিলাসনের জমিদারবাড়ির পুজোর।

এবারও সপ্তমীর সকালে বাড়ির কাছেই পুনর্ভবা নদীতে দেবীর ঘট ভরানোর সময় শূন্যে গুলি ছুড়বেন জমিদারবাড়ির রায় পরিবারের সদস্য রাকেশকুমার রায়। এই নিয়ে টানা ৩৫ বছর ধরে তিনি ওই রীতি পালন করে আসছেন। জানা যায়, তৎকালীন সময়ে গ্রামবাসীদের কাছে জমিদার বাড়ির পুজো শুরুর বার্তা পৌঁছতেই শূন্যে গুলি ছোড়ার রেওয়াজ চালু হয়েছিল। জমিদার বাড়ির পুজোয় সাধু-সন্ন্যাসীদের উপস্থিতিতে সপ্তমীতেই পঞ্চবাদ্য বাজিয়ে কলাবৌকে পুনর্ভবা নদীতে স্নান করানো হয়।

দুর্গা পুজো চলাকালীন জমিদার বাড়ির মন্দিরে থাকা রাধাকৃষ্ণ, গৌড়-নিতাই, মহাবীর ও শিবের পুজোও একই সঙ্গে করা হয়। প্রায় ২১৫ বছরের প্রাচীন ওই জমিদার বাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ নিয়ম-নিষ্ঠা, জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। এই পুজোকে ঘিরেই ফি বছর মেতে ওঠেন আদিবাসী অধ্যুষিত মালদহের তিলাসন গ্রামের বাসিন্দারা।

রায় পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা জানাচ্ছেন, প্রায় আড়াইশো বছর আগে উত্তর প্রদেশের গাজিপুর জেলার সোনারি গ্রাম থেকে হবিবপুর ব্লকের তিলাসন গ্রামে এসেছিলেন রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ অবোধনারায়ণ রায়। জমিদারির পাশাপাশি সে সময় নদীপথে তাঁদের নানা ব্যবসাও ছিল। সন্ন্যাসী বিদ্রোহ চলাকালীন জমিদার বাড়িতে তিন সন্যাসী এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই বাড়িতেই সেই সন্যাসীরা মারা যান এবং তাঁদের সমাধি দেওয়া হয়। সেই সমাধিস্থল এখনও রয়েছে। সন্ন্যাসীদের কথা অনুযায়ীই বৈষ্ণব পদ্ধতিতে দুর্গা পুজো শুরু হয় তিলাসনের জমিদার বাড়িতে। জমিদার অবোধনারায়ণের ছেলে শিবপ্রসাদ রায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। এর পর ব্রজেন্দ্রনারায়ণ রায়, শঙ্করপ্রসাদ রায় ও বর্তমানে তাঁদের উত্তরসূরীরা এই পুজো করে আসছেন। রায় পরিবারের অন্যতম সদস্য রাকেশকুমার রায় (পাপ্পু) বলেন, ‘‘পরিবারের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই পূর্বপুরুষেরা বন্দুক ব্যবহার করতেন।’’

তিনি জানান, এখনও লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক থেকেই পুনর্ভবা নদীর পাড় থেকে শূন্যে গুলি ছুড়ে পুজোর সূচনা করা হয়ে থাকে। পুজোর চার দিনই নানা ব্যঞ্জনে অন্নভোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রীতি মেনে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের পর গ্রামবাসীদের মধ্যে খিচুড়ি ভোগ বিলি করা হয়।

জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই পুজোয় স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি অন্যরাও মেতে ওঠেন। মালদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের পাশাপাশি বিএসএফের একাধিক কর্তারাও এই পুজোয় প্রতিবার আসেন বলে দাবি।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এখন এলাকায় আরও কয়েকটি পুজো হলেও জমিদার বাড়ির পুজোর মাহাত্ম্যই একে সবার থেকে আলাদা করে দেয়।

Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy