বাসের মধ্যে কোলের শিশু কেঁদেই চলেছে। মায়ের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। শিশুটির খিদে পেয়েছে বলে সহযাত্রী এক মহিলা জানালেও মায়ের কোনও হেলদোল নেই। দেখেশুনে বাসের অন্য যাত্রীদেরও সন্দেহ হয়। শিশুটি তার নিজের বাচ্চা কি না জানতে চাইলে অসংলগ্ন জবাবে সন্দেহ আরও বাড়ে। বাচ্চাটিকে ওই মহিলা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, এই আশঙ্কায় শিশু-সহ ওই মহিলাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন যাত্রীরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডের ঘটনা। ছেলেধরা অভিযোগে ওই মহিলা ধরা পড়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরে অবশ্য তদন্তে নেমে বালুরঘাট থানার পুলিশ জানতে পারে, ওই মহিলা মানসিক অবসাদগ্রস্ত। তাই কারও কোনও কথার উত্তর দেননি। খবর পেয়ে বালুরঘাটের মাহিনগর এলাকার বাসিন্দা ওই বধূর শ্বশুরবাড়ি থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি থানায় ছুটে আসেন। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য গিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করে ওই মহিলা ও শিশুকে শনাক্ত করলে প্রায় চার ঘণ্টার নাটকে যবনিকা পড়ে। বালুরঘাট থানার আইসি জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘ওই মহিলা ও শিশুকন্যাটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভুল বুঝে বাসের কয়েকজন যাত্রী ওই মহিলাকে ছেলেধরা ভেবে বসেন।’’
এ দিন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে মহিলার শ্বশুর সুনীল দাস বলেন, ‘‘বউমা মানসিক ভাবে অসুস্থ। কথা কম বলে। আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি। তাই বাসের মধ্যে লোকজন ভুল বুঝে ছেলেধরা মনে করায় ওই কান্ড হয়েছে।’’ আড়াই বছরের শিশুকন্যা সুস্মিতা তাঁর নাতনি, জানান সুনীলবাবু। এলাকার ডাঙা পঞ্চায়েতের সদস্য নিতাই সরকার বলেন, ‘‘ওই বধূ রুবি দাস এলাকারই বাসিন্দা। পেশায় বাসকর্মী সুপদ দাসের স্ত্রী। ওঁদের বছর পাঁচেকের আরও একটি সন্তান রয়েছে। রুবিদেবীর বাবার বাড়ি রায়গঞ্জের চণ্ডীতলা এলাকায়।’’
সকালে বাবার বাড়ির লোকজন রুবিকে রায়গঞ্জ থেকে বালুরঘাটগামী বাসে তুলে দেন। শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে মহিলার বাপের বাড়ি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই বেসরকারি বাসের এক যাত্রী বালুরঘাট শহরের বাসিন্দা ঝর্না সাহা বলেন, ‘‘বাসে ওঠার পর থেকে শিশুকন্যাটি কাঁদছে। গঙ্গারামপুরের পর থেকে শিশুটি জোরে কাঁদতে থাকলেও মহিলাক শান্ত করার জন্য বলা হয়। কোনও সাড়া মেলেনি। তাতে সন্দেহ হয়।’’
বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডে বাস থামতেই ঝর্নাদেবী ও কয়েকজন মিলে বাচ্চা-সহ ওই মহিলাকে ধরে সোজা বালুরঘাট থানায় হাজির হন। এদিকে শ্বশুর সুনীল মাহিনগরে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে নাতনি বউমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে গেলে ঘটনা জানতে পারেন।