ছোঁয়া: খালি হাতে ছুঁলে বিপদ। কিন্তু শুনছে কে? —নিজস্ব চিত্র।
খাদ্য সুরক্ষা বিধির তোয়াক্কা না করে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ মিষ্টির দোকানে খোলা হাতেই মিষ্টিজাত সামগ্রী ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে। অথচ, খোলা হাতে কোনও মিষ্টি দেওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাতে ওই মিষ্টি যে বা যাঁরা খাচ্ছেন তাঁদের শরীরে ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া জনিত সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন। যা নিয়ে মিষ্টির দোকান মালিকদের একাংশও উদ্বিগ্ন।
কিন্তু দোকান মালিকদের আরেক অংশ সে সবের তোয়াক্কা করছেন না। ক্রেতারা প্রতিবাদ করলে সুভাষপল্লির এক মিষ্টি বিক্রেতা দুর্ব্যবহারও করেছেন বলে পুরসভার কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই শহরবাসীদের তরফে দ্রুত মিষ্টির দোকানগুলিতে যাতে চিমটে কিংবা হাতে ‘গ্লাভস’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয় সে জন্য পুলিশ, প্রশাসন-পুরসভার কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
শহরে এমন খোলা হাতে মিষ্টি বিক্রির ঘটনা বন্ধ করাতে পুরসভা পদক্ষেপ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেই দেখি অনেক দোকানে কর্মীরা খালি হাতেই মিষ্টি দিচ্ছে। চিমটে কিংবা গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসারদের পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছি।’’
কিন্তু, মিষ্টি ব্যবসায়ীদের অনেকেই তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। শিলিগুড়ির কয়েকজন মিষ্টির দোকান মালিক জানান, রসগোল্লা ছাড়া বাকি শুকনো মিষ্টি খালি হাতেই দেওয়া হয়ে থাকে। এক দোকান মালিক তো সাফ জানিয়ে দিলেন, ক্রেতাদের পক্ষ থেকে কেউ আপত্তি না করা অবধি তাঁদের দোকানের কর্মীরা খালি হাতেই মিষ্টি বিক্রি চালিয়ে যাবেন। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, মিষ্টি ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে খাদ্য নিরাপত্তা বিধি মানলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সেটা না হলে কী কী বিপত্তি হতে পারে তা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রবীণ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ দে সরকার। তিনি বলেন, ‘‘খালি হাতে কোনও মিষ্টি ক্রেতাকে দিলে অনেক বিপদ ঘটতে পারে। প্রথমত, দোকানকর্মীর হাতে কোনও ব্যাকটেরিয়া জনিত চর্মরোগ থাকলে তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট কর্মীর হাতে ছত্রাক জনিত সংক্রমণ থাকলে তা ছড়াতে পারে। মূলত, খালি হাতে মিষ্টি বিক্রি করলে পেটের রোগ, অ্যালার্জির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা রক্তেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে।’’ তাই অরুপবাবুর মতে, নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই খালি হাতে কেউ মিষ্টি যাতে না দেয় সেটা ক্রেতাকেই খেয়াল রাখতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক তথা কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের কর্ণধার রবিন পাল বলেন, ‘‘চিমটে, গ্লাভস ব্যবহার করতেই হবে। কার হাত পরিচ্ছন্ন, কার নোংরা সেটা ক্রেতারা বুঝবেন কী ভাবে! দোকান মালিকদেরই তা দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy