Advertisement
E-Paper

দাবি আদায়ে মঞ্চ গড়ে এগিয়ে চলেছেন বালুরঘাটের প্রবীণেরা

হাতে-পায়ে তেমন জোর আর নেই। কিন্তু মনটা এখনও তাজা। সেই ভরসাতেই নিজেদের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে এগোচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রবীণ।

অনুপরতন মোহন্ত

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৭:২০
আড্ডার আসরে চলে গানও। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

আড্ডার আসরে চলে গানও। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

হাতে-পায়ে তেমন জোর আর নেই। কিন্তু মনটা এখনও তাজা। সেই ভরসাতেই নিজেদের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে এগোচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রবীণ।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে অফিসপাড়া সূর্য সেন সরণি এলাকায় কোনও দিন গেলেই দেখা যাবে, প্রবীণেরা তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কী ভাবে এগোবেন, তার ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। অবহেলা নয়, প্রাপ্য অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিতে ওঁরা নীরব লড়াইয়ে নেমেছেন। পাঁচ জন, দশ জন করে গুটিগুটি পায়ে এগিয়েছেন। বালুরঘাটে প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ মঞ্চ গড়ে তুলে শতাধিক ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক বাসিন্দা এখন নিজেদের দাবি সামনে তুলে আনছেন। তাতে এমনই উৎসাহ যে, শহরের খিদিরপুর এলাকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মী নিলয় চাকি বয়সের ভারে একা চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু সুযোগ পেলেই রিকশা ভাড়া করে তাঁরই মতো সত্তরোর্ধ্ব সাহেবকাছারি এলাকার প্রদীপ সরকার, রণেন সরকারদের সঙ্গে প্রবীণ নাগরিক মঞ্চের ওই কার্যালয়ে চলে আসেন।

কাজের পাশাপাশি প্রবীণ অরুণকুমার সেন থেকে দিলীপ দাশগুপ্ত, দেবব্রত মোহান্তরা মন ভাল রাখতে বসে পড়েন দাবা, ক্যারম কিংবা তাস নিয়ে। পাশাপাশি পাশের ঘরে চলে ডুগি তবলা বাজিয়ে গানের আসর। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফণীন্দ্রনাথ বসাক হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান ধরলে তাতে মেতে থাকেন নিশা ঘোষ, সুহাস গুহ, ভবেশ মন্ডলেরা।

মনোরঞ্জনের সঙ্গে মঞ্চের একাংশ প্রবীণের ব্যস্ততা থাকে সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্টের নানাবিধ সরকারি প্রয়োগ ও সুবিধা প্রদানের বিষয় নিয়ে। চিঠিচাপাটি, দাবি সনদ লেখা থেকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে পাঠানোর তোড়জোর নিয়ে প্রতিনিয়ত তাঁদের মিলিত লড়াই জারি রয়েছে। চাকরি জীবনে এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী, অবসরের পর এখন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের মঞ্চটা এক হয়ে গিয়েছে।

সম্প্রতি সংসারে নির্যাতিত দুজন বয়স্ক নাগরিককে মঞ্চের তরফে আইনের রক্ষাকবচের জেরে পরিত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বয়স্ক দুই প্রবীণ ছেলে বৌয়ের কাছ থেকে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ মঞ্চের সম্পাদক চঞ্চলকুমার শিকদার বলেন, ‘‘বয়স্কদের চিকিৎসা বিষয়ে বালুরঘাটে এক দীর্ঘ সমস্যা রয়েছে। সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড চালু হয়নি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে রাজ্যে দক্ষিণ দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতে জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড তৈরির জন্য হত ২০১৫ সালে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেও কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে চঞ্চলবাবু অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘আইসিইউতে ভর্তির ব্যাপারে বয়স্করা অগ্রাধিকার পান না। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও সকলের সঙ্গে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় না।’’ বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার দাবি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কাজ হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দাবি সনদ পেশ করে চলেছি।’’ এ দিন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে ফোন ধরেননি। বালুরঘাট হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রদীর ধর বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

শহরের অফিসপাড়ায় বালুরঘাট পুরসভা থেকে তিনটি ঘর পেয়ে প্রবীণেরা সাজিয়ে নিয়েছেন। একটিকে অফিস ঘর করে বাকি দুটিতে বিনোদন এবং খেলার ঘর করে সাজিয়ে নিয়েছেন। রোজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গানবাজনা, তাসের ব্রিজ প্রতিযোগিতা ও গল্পগাছায় মেতে থাকছেন। পুরসভা থেকে খেলার সামগ্রী এবং আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে প্রবীণদের ওই মিলনক্ষেত্রে নেই কোনও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা। সম্প্রতি বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষ প্রবীণ নাগরিক মঞ্চে গিয়ে গান বাজনার সরঞ্জাম ও একটি আলমারি দিয়ে সাহায্য করেছেন।

পুরসভার ওই দোতলা ভবন ভাড়া নিয়ে এক সময় জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির অফিস চালু ছিল। অফিসটি বিদ্যুৎ দফতরের নিজস্ব ভবনে চলে যাওয়ার পরে সেখান থেকে শহরের একমাত্র বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়ার কিয়স্কটিও তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। বয়স্ক নাগরিকদের দাবি ও আপত্তির জেরে কিয়স্কটি সেখানে রয়ে যাওয়ায় শহরবাসী উপকৃত হয়েছেন। রেলের টিকিট কাউন্টারে আলাদা লাইনের সুযোগ প্রবীণেরা আদায় করে নিয়ে সমর্থ হলেও ব্যাঙ্ক থেকে ডাকঘরের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ তাঁদের নেই বলে প্রবীণদের অভিযোগ। শহরের মধ্যে স্বল্প মূল্যের একটি ওষুধের দোকান চালু থেকে রাতে স্বল্প মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার দাবিও করেছেন তাঁরা।

Balurghat elders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy