Advertisement
E-Paper

দেবেন মোড়েই মিলল বিধায়কের দেহ

স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই বিধায়কের শোবার ঘরের বিছানা আগলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দেবেনবাবুর স্ত্রী চাঁদিমা রায়, মায়ের পাশে বসে মেয়ে সৃষ্টি। 

বিকাশ সাহা 

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৫:৩২
তদন্তে: ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ কুকুর। বালিয়াদিঘি মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

তদন্তে: ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ কুকুর। বালিয়াদিঘি মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

হেমতাবাদের ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বালিয়াদিঘি মোড়। বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরে গড়ে ওঠা জমজমাট এই মোড়ের নাম লোকমুখে দেবেন মোড় হয়ে গিয়েছে। সোমবার সকালে এই মোড়েই একটি মোবাইল সারাই-এর দোকানের সামনে থেকে দেবেনবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই মোড় থেকে কিলোমিটার দু’য়েক দূরে বালিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। প্রায় চলাচলের অযোগ্য এই রাস্তার মোড়ে মোড়ে এ দিন সকাল থেকেই বসেছে পুলিশ পিকেট। রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে সাধারণ মানুষের জটলা।

বালিয়া গ্রামের জনবহুল এলাকায় প্রাচীর ঘেরা চারচালা বিধায়কের বাড়ির সামনে গ্রামবাসীরা ভিড় জমিয়েছেন। বিধায়কের মৃত্যুতে জেলা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা তদন্তের স্বার্থে বিধায়কের বাড়িতে এসেছেন। এসেছেন বিজেপির সাংসদ থেকে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্ব। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই বিধায়কের শোবার ঘরের বিছানা আগলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দেবেনবাবুর স্ত্রী চাঁদিমা রায়, মায়ের পাশে বসে মেয়ে সৃষ্টি।

চাঁদিমা বলেন, ‘‘নিমন্ত্রণ থাকায় সামনের বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে রবিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন উনি। মেয়েকে নিয়ে পাশের ঘরে আমি ঘুমিয়েছিলাম। সকালে মৃত্যুর খবর পাই। আমার স্বামীর কাছ থেকে অনেকে ধারে টাকা নিয়েছেন। সেই টাকা যাতে না দিতে হয় সেই কারণেই আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে।’’

শোকার্ত: ভেঙে পড়েছেন মৃত বিধায়কের বোন ও ভাই। নিজস্ব চিত্র

দেবেনবাবুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা গ্রাম জুড়ে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামের অনেকে এদিন সকাল থেকে মুখে অন্ন তুলতে পাড়ছেন না। এলাকার বাসিন্দা অমল বর্মণ বলেন, ‘‘আজ আমরা অভিভাবক হারালাম। এমন বিপদের আশঙ্কা আগে জানতে পারলে আমরা ঢাল হিসেবে দেবেনদার সামনে দাঁড়িয়ে যেতাম।’’ মহেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘গ্রামের গরিব, অসহায় মানুষের মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসার খরচ— কাউকে ফেরাতেন না উনি।’’ কলেশ্বর বর্মণ বলেন, ‘‘দলমত দেখতেন না দেবেনদা।’’ মঙলি বর্মণ বলেন, ‘‘দেবেনদাকে গ্রামের মানুষ মাথায় তুলে রাখতেন। সকাল থেকে গ্রামের মানুষ মুখে ভাত তুলতে পারছেন না।’’

ওঁরা বলেন

‘‘বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দেবেনের এই পরিণতি আমরা আশা করিনি। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
অপূর্ব পাল, সিপিএম জেলা সম্পাদক

‘‘মানুষ বলছেন, দেবেনবাবুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এর পিছনে তৃণমূল রয়েছে বলে বাসিন্দারা বলছেন। সিবিআই তদন্ত চাই।’’ দেবশ্রী চৌধুরী, রায়গঞ্জের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী

‘‘বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে গিয়ে কেন আত্মহত্যা করবেন দেবেনবাবু? তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।’’ বিশ্বজিৎ লাহিড়ী, বিজেপি জেলা সভাপতি

‘‘আমরাও চাই দেবেনবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত হোক। হেমতাবাদে তৃণমূলের এত দুর্দিন আসেনি যে, দেবেনবাবুকে
খুন করবে।’’ কানাইয়ালাল আগরওয়াল, জেলা তৃণমূল সভাপতি

‘‘তৃণমূল খুনের রাজনীতি করে না। দেবেনবাবু খুন হয়ে থাকলে, আইন আইনের পথে চলুক।’’ অমল আচার্য, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা ইটাহারের বিধায়ক

‘‘আমার স্বামী অনেককে টাকা ধার দিয়েছিলেন। কেউ বা কারা টাকা শোধ করতে না পেরে স্বামীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে মনে হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি আছে কিনা বলতে পারছি না।’’ চাঁদিমা রায়, দেবেনের স্ত্রী

Hemtabad BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy