Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Camel Smuggling

দেড় মাস বাদে পেট ভরল কাঁটাঝোপে

গত ৩০ ডিসেম্বর উটগুলি আটক করার পড়ার পরে জানা যায়, রাজস্থান থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল ১১টি উট।

তৃপ্তি: রাজস্থানে পৌঁছে কাঁটাজাতীয় গাছ খেতে ব্যস্ত উটগুলি। নিজস্ব চিত্র

তৃপ্তি: রাজস্থানে পৌঁছে কাঁটাজাতীয় গাছ খেতে ব্যস্ত উটগুলি। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
বংশীহারি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৮
Share: Save:

‘‘আচ্ছা মশাই, উট কি কাঁটা বেছে খায়?’’

সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লায়’ ফেলুদার কাছ থেকে লালমোহনবাবু আর সে উত্তর পাননি। উত্তর মিলল না দক্ষিণ দিনাজপুরেও। রাজস্থানের কাঁটাজাতীয় ঝোপঝাড়ের বদলে প্রায় দেড় মাস ন’টি উটকে খেতে হল তেতো নিমপাতা আর ঝোলা গুড়। এমন ঘটনা দক্ষিণ দিনাজপুরের। রাজস্থান থেকে জেলায় এসে পাচারের আগে, বংশীহারিতে উদ্ধার হয় উটগুলি। আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই দ্রুত সুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাজস্থানের একটি স্বেচ্ছাসেবী হেফাজতেফিরেছে সেগুলি।

গত ৩০ ডিসেম্বর উটগুলি আটক করার পড়ার পরে জানা যায়, রাজস্থান থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল ১১টি উট। এক-একটি উট প্রায় ১৫ লক্ষ টাকায় বিকোয় বাংলাদেশে। পুলিশ জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকদের খবর দেয়। তাঁরা এলাকায় গিয়ে দেখেন, দু'টি উঠ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছে। বাকি ন’টি উট গঙ্গারামপুর থানা এলাকার একটি নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হয় ঠিকই, কিন্তু তখন সেগুলি মারাত্মক অসুস্থ। প্রায় হাড় বেরিয়ে পড়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ উপ অধিকর্তা অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘দীর্ঘ সফরে রোগা হয়ে যায় উঠগুলি। গায়ে ঘা, শরীরে জল ছিল না। গায়ে ব্যথাও ছিল ওদের। সেগুলি চিকিৎসার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্যালাইন চালাই। কিন্তু ওদের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খাবার। কাঁটাজাতীয় খাবার এখানে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা নিমপাতা-গুড় দিচ্ছিলাম। অল্প করে খাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত এপিক দানা খেতে শুরু করে।’’ একটু সুস্থ হয়ে ওঠে উটগুলি।

কেন এক মাস থাকতে হল উটগুলিকে? মামলা রুজু হয়েছিল আগেই। গত ৫ জানুয়ারি মামলায় গঙ্গারামপুর এসিজেএম রাজস্থানে মানেকা গাঁধীর সংস্থা ‘পিপল ফর অ্যানিম্যাল’-এ সেগুলি পাঠাতে বলে। প্রাণিসম্পদ কর্তাদের দাবি, কিছু অসুবিধার জন্য সেগুলি নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তখনই সমস্যা শুরু। আসরে নামেন জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ। তিনি খোঁজখবর করে রাজস্থানের অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে রাজি করান। পরে আদালতকে জানালে, আদালত সেখানে উটগুলিকে পাঠাতে বলে। রাজস্থান থেকে ট্রাক জোগাড় করেন জেলা পরিবহণ কর্তা সন্দীপ সাহা। ভাড়া বাবদ প্রশাসন প্রায় দু’লক্ষ টাকা দেয়। গাড়ির পাটাতনে বালি দিয়ে উটগুলিকে রওনা করানো হয় কয়েক দিন আগে।

বৃহস্পতিবার সেগুলি রাজস্থানের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে বলেই দাবি প্রশাসনের। জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘উটগুলির স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই দ্রুত পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’’ গলা উঁচু করে ফের কাঁটা-ঝাড় খেতে শুরু করেছে তারা। তবে, কাঁটা বেছে খাচ্ছে কিনা, তা অবশ্য কেউ বলতে পারেননি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Camel Smuggling South Dinajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE