Advertisement
E-Paper

টেনশন লেনে কা নেহি...

...সির্ফ দেনে কা হ্যায়, মামু। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এ এ ভাবেই নিজের টেনশন অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেন মুন্না। যার ধাক্কায় কাত হয়ে গিয়েছিলেন এমনকী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকেও। ২০০৩ সালে ছবিটি বেরোতেই এই ডায়ালগ হিট। ভোটের পরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার সময় প্রার্থীদের হাল কী, খোঁজ করতে গিয়ে এর সঙ্গে মিল পেলেন কিশোর সাহাকদিন আগেও হনহন করে হেঁটেছেন বালুরঘাটের জোট প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী। এখন ধীরে ধীরে হাঁটছেন। অনেক দৃঢ় পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে অনেকের। তবে টেনশন যে কম নেই, সেটাও অনুগামীরা অনেকে মানছেন। না হলে তাঁদের ‘বিশ্বনাথদা’ সদলবলে নাটক দেখতে ছোটেন!

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০২:৫২

দেখছেন নাটক

কদিন আগেও হনহন করে হেঁটেছেন বালুরঘাটের জোট প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী। এখন ধীরে ধীরে হাঁটছেন। অনেক দৃঢ় পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে অনেকের। তবে টেনশন যে কম নেই, সেটাও অনুগামীরা অনেকে মানছেন। না হলে তাঁদের ‘বিশ্বনাথদা’ সদলবলে নাটক দেখতে ছোটেন!

পুজোপাঠে শঙ্কর

বিশ্বনাথের প্রতিপক্ষ তথা মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী এখন পুজোপাঠের সময় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের অনেকেই সে কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘শঙ্করদা ভোটের পরে যেন একটু বেশিই পুজো করছেন। পার্টি অফিসেও যাচ্ছেন। বুধবার তো হিলি সীমান্তে আত্মঘাতী কিশোরীর বাড়িতে, এলাকায় ঘুরে কত লোকের সঙ্গে কথাই না বলেছেন। সকলকেই আশ্বাস দিয়েছেন। টেনশন কাটাতে কাজের মধ্যে ডুবে থাকাটাই বেশি ভাল। তাতে প্রতিপক্ষও বেশ চাপে থাকে— হাসতে হাসতে মন্তব্য শঙ্কর অনুগামী তৃণমূল কর্মীর।

কেউ কুম্ভস্নানে


কুম্ভে কানাইয়ালাল অগ্রবাল

কোচবিহারের তুফানগঞ্জের জোট তথা কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী আস্তিক মানুষ। তাঁর দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম-কর্ম অনেকটাই জুড়ে রয়েছে। নিয়মিত পুজোও করেন। তবে ভোটের প্রচারে সে সব বাদ পড়েছিল। সকাল হতেই প্রচারে বের হতে হতো। কোচবিহারের বাড়ি থেকে তুফানগঞ্জে গিয়ে থাকতে হয়েছিল। ভোট শেষের পরে মাসখানেক পরে গত শনিবার বাড়ি ফিরেছেন। এ দিন সকাল সকাল ঠাকুর ঘরে ঢুকেছিলেন। অনেকদিন বাদে দীর্ঘক্ষণ পুজো দিয়েছেন, ঠাকুরঘরে কাটিয়েছেন। দেব-দেবীদের পায়ে শ্যামলবাবু নিজের বাগানের ফুলই দিয়ে থাকেন। এ দিন সেই বাগানেও কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। জবা, বেলি কেমন ফুটেছে তা দেখেছেন। গণনা পর্যন্ত ঠাকুরঘর-বাগানেই বেশি সময় কেটে যাবে বলে জানালেন তিনি। ইসলামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল অগ্রবাল কুম্ভমেলায় গিয়ে স্নান করে প্রার্থনা সেরে এসেছেন।

হাটেবাজারে


তখন প্রচারে সাবিত্রী

অনেক দিন পরে ফের নিজে বাজার শুরু করেছেন রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। প্রতিদিন বাজারে যাওয়া সাবিত্রীদেবীর অভ্যেস। তাতে অবশ্য ভোট প্রচার ছেদ ফেলেছিল। এখন আবার নিয়মিত বাজারে যাচ্ছেন। মালদহের মানিকচকের তৃণমূল প্রার্থী সাবিত্রীদেবী বললেন, ‘‘আবার বাজারে গিয়ে নিজে দেখে শাকসব্জি কিনছি। নিজে বাজার করার একটা নেশা রয়েছে। পরিবারকেও সময় দিচ্ছি।’’

মাছ-মাংসে কেশব

বাজারে গিয়ে মাছ কিনেছেন কোচবিহারের সিতাইয়ের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায়ও। দিনহাটার চওড়াহাট বাজারে গিয়েছিলেন বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক কেশববাবু। মাছ কেনার পরে পাঁঠার মাংসও কিনেছেন। তবে সবটা নিজের জন্য নয়। কেশববাবু বললেন, ‘‘এখন বাড়িতে বেশি সময় কাটাচ্ছি। মেয়ে-জামাই এসেছে। তাই একটু ভালমন্দ বাজার করলাম।’’

টেনশনে রবি

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও এখন পরিবারে মন দিয়েছেন। ভোটের দিন মেজাজ হারিয়ে দলেরই এক কর্মী চড় কষিয়েছিলেন রবিবাবু। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কয়েক জন বললেন, ‘‘ভোটের পরে দাদার মেজাজ একটু কমেছে মনে হচ্ছে।’’ এখন বাড়িতেই অনেকটা সময়, সদ্যোজাত নাতির সঙ্গে কাটান। কখনও খুদে হাত দিয়ে নাতিই চড় মেরে দেয় দাদুর গালে। হেসে ওঠেন দুঁদে নেতা, ‘দাদু’ রবীন্দ্রনাথ। কেউ কেউ হাসতে হাসতে বলে ওটেন, নাতির সঙ্গে খুনসুটিতে টেনশন কাটাচ্ছেন তাঁদের রবিদা। পার্টি অফিসে কিংবা কোথাও সাংবাদিক পেলেই খোঁজ নেন, ‘বলি খবরটবর কী!’ তার পরে সংযোজন করেন, ‘‘যাই-ই হোক না কেন, ামরা কিন্তু ফের আসব।’ জোটের কোনও চান্স আছে বলে মনে হয় না।

হিল্লি দিল্লি

ফল প্রকাশে দেরি রয়েছে। তাই খামোকা অবসর না কাটিয়ে কাজে ফিরেছেন কেউ। কেউ বা অবসর কাটাতেই পাড়ি দিয়েছেন কলকাতা। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক তথা বিরোধী জোটের প্রার্থী পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে কলকাতায় গিয়েছেন। ভোট গণনার এক-দু’ দিন আগে তিনি ফিরবেন বলে জানা গিয়েছে। চাকুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী আলেমা নুরিও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিল্লি ঘুরতে গিয়েছেন। চাকুলিয়ার এক নেতার কথায়, ‘‘দুই যুযুধান প্রার্থীই রাজধানীতে রয়েছেন। এক জন রাজ্যের, অন্য জন দেশের রাজধানীতে।’’ চোখের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক তথা জোটের প্রার্থী হয়েছেন পরেশবাবু। মেখলিগঞ্জের ফব প্রার্থী পরেশ অধিকারী চোখের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় রয়েছেন। বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণের প্রার্থী নিখিল রঞ্জন দে কলকাতায় গিয়েছেন।

গম্ভীর করিম

ইসলামপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী এলাকার লোকজনদের সঙ্গে দেখা করছেন বেশি করে। রোজই নানা প্রান্তের কর্মীদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন, সব ঠিক আছে কি না। কখনও হাসছেন। কখনও গুম হয়ে যাচ্ছেন। তারই ফাঁকে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করেছেন। গোয়ালপোখরের তৃণমূলের বিধায়ক গোলাম রব্বানি কয়েক দফায় কলকাতায় গিয়েছেন। আপাতত এলাকায় বুথ ভিত্তিক হিসেব কষতেই ব্যস্ত।

ঘুমোচ্ছেন লেবু


আবু নাসের খান চৌধুরী

ফল যা হওয়ার হবে। তা বলে ফল বার হওয়ার আগে আর ছোটাছুটি আর টেনশন নিতে চান না সুজাপুরের প্রার্থী আবু নাসের খান চৌধুরী তথা লেবুবাবু। কৌতুয়ালি বাড়িতে বসেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি। ঘুম থেকে উঠছেন একটু বেলা করে। তার পরেই চোখ রাখছেন খবরের কাগজে। বয়স জনিত সমস্যা থাকায় নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন। ভোটের সময় যা ঠিকমতো হতো না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ খেতে ভুলে তো যেতামই মাঝেমাঝে, ভোটের জন্য ঠিক মতো খাওয়াদাওয়াও হতো না। এখন আবার সময় মতো সব কিছু শুরু করেছি।’’ ওই কেন্দ্রের আর এক প্রার্থী তথা কৌতুয়ালি পরিবারের কংগ্রেসি সদস্য ইশা খান চৌধুরীও বেশ হাল্কা মেজাজেই রয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে নিয়ম করে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ফলাফল নিয়ে ভাবার কিছু নেই। এখন শুধুই বিশ্রামের জোর দিচ্ছি।

বিশুদার হাসি

নতুন জেলা আলিপুরদুয়ারে নির্মল দাস কতটা বেগ দিতে পারবেন জোট প্রার্থীকে? তৃণমূলের দুই জেলার সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর কেরিয়ার গ্রাফ কি ভোটের ফলে পরে হু হু করে উঠবে, নাকি ঝপ ঝপ করে পড়বে— এই নিয়ে বাজি ধরা শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু চায়ের আড্ডায়। সৌরভ হিসেব কষে দেখছেন, আগের চেয়ে ফল ভাল হবেই। বিশ্বরঞ্জনবাবু মানে চা বলয়ে কংগ্রেস মহলের বিশুদা, তা শুনে হাসছেন। তিনি বলছেন, জোটের ঝড় সত্যি যদি বয়ে তাকে তা হলে ভালমন্দ সব কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটাও টেনশনের চাপানউতর।

চিন্তামগ্ন শঙ্কর


ফোনে মগ্ন শঙ্কর মালাকার

শঙ্কর মালাকার এমনিতেই একটু ধর্মভীরু। তার উপরে এত দিন অপেক্ষার চাপ নিতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই গম্ভীর হয়ে যাচ্ছেন। কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। এত দিন সকালে বিধায়ক অর্থাৎ নিজের অফিসে ঢুকতেন ন’টার পরে। কিন্তু এখন এসে পড়ছেন তাড়াতাড়ি। কোনও কোনও দিন তো আটটার আগেই। অনেকেই দেখা করতে আসছেন মাটিগাড়া নকশালবাড়ির কংগ্রেস প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে। কোথায় কেমন ভোট হয়েছে, সেটা জানতে চাইছেন তাঁদের কাছে। তার পর মিলিয়ে নিচ্ছেন নিজের হিসেবের সঙ্গে। কপালে ভাঁজ দেখে সঙ্গীরা কেউ কেউ বলছেন, টেনশন তো আপনার নয় দাদা, অন্যের। তখন হাসি ফুটছে।

অশোকের বাড়িতেও


কাজের মধ্যে ডুবে অশোক। চিন্তাও রয়েছে।

শিলিগুড়ি মডেলের অলিখিত জনক তিনি। ফলে, তাঁর দায়িত্ব, টেনশনও ততোধিক। তিনি অশোক ভট্টাচার্য। অশোকবাবু সকাল থেকে মেয়রের কাজে লেগে পড়ছেন। আর সুযোগ পেলে পার্টি অফিসে গিয়ে হিসেব কষছেন। কাজের ফাঁকে অজস্র ফোন করে নিশ্চিত হতে চাইছেন যে, তিনিই জিতছেন। আবার তাঁরাই যে ক্ষমতায় আসতে চলেছেন, সেটাও কখনও বোঝাতে ছাড়ছেন না। এই তো ক’দিন আগেই বাগডোগরায় ব্যাঙ্কে ডাকাতির পরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের শান্ত করতে পুলিশের সমালোচনা করতে গিয়ে বলে দিয়েছেন, ১৯ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পুলিশকেও বলে দিয়েছেন, এ ভাবে চলবে না। সকলকে আইনরক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। মেয়র টেনশন কাটাচ্ছেন কাজের মধ্যে। বিপক্ষকে টেনশন দিচ্ছেন বিবৃতি দিয়ে। কিন্তু, তাঁর বাড়ির লোকের উপায় কী! রুদ্রেশ্বর ভবনের ছোট্ট ঠাকুরঘরে নিয়মিত পুজো হচ্ছে। প্রার্থনাও চলছে ঠাকুরের কাছে।

জল্পেশে গৌতম


জল্পেশের প্রার্থনা গৌতমের।

ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির মতো ‘নিশ্চিত’ আসনও কি না জোটের বাজারে অনিশ্চিত হয়ে য়েতে পারে! এমন শুনেটুনে তো উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের অনেকের মথায় যেন বাজ পড়েছে। কেউ নিজেই ধর্মস্থানে মালা, সন্দেশের বাক্স রাখছেন। কেউ ধর্মস্থানে চাদর চড়াচ্ছেন। খোদ গৌতমবাবু একদিন সাতসকালে জল্পেশ মন্দিরে হাজির। দীর্ঘ সময় ধরে পুজো দিলেন। ভোটের হিসেবে-টিসেব ভাল মনে হলেও মার্কশিট হাতে না পাওয়া অবধি কী নিশ্চিন্তে ঘুমানো য়ায়। মনে রাখতে হবে, মাত্র মাস চারেক আগেই গৌতমবাবুর ‘বাই পাস সার্জারি’ হয়েছে। ভোটের সময় সংক্রমণ হওয়ায় ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে প্রচার করতে হয়েছে। তবে বিপক্ষকে টেনশনে ফেলতে রবীন্দর জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের পরে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নে গৌতমবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যে যাই বলুক, আমরাই ফের ক্ষমতায় আসছি।’’

assembly election 2016 TMC Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy