উদ্বিগ্ন: সুকরি দাস। নিজস্ব চিত্র।
মা জানেনই না, তাঁর শিশুকে দত্তক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়িতে। শিশুপাচার-কাণ্ডে ফের এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে জলপাইগুড়িতে। প্রশাসনের অন্দরেও এ নিয়ে আলোড়ন পড়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে জলপাইগুড়ির টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা গীতা ওরফে সুকরি দাসের একটি আবেদন থেকে। জলপাইগুড়ি শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে সুকরি আবেদন করে দাবি করেন, হোমের বাসিন্দা তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে ফেরত দেওয়া হোক। ২০১৬ সালে সুকরি দাসের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। সুকরির শরীরের একাংশ দগ্ধ হয়ে যায় আগুনে। সেই সময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সুকরির এক বছরের শিশুকন্যা এবং ছয় বছরের ছেলেকে হোমে পাঠানো হয়। এই ঘটনার বছরখানেক বাদেই সেই হোমে সিআইডি অভিযান চালিয়ে শিশুপাচারের ঘটনার হদিশ পায়। হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সেই সময় সুকরির দুই ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির একটি হোমে পাঠানো হয়েছিল। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরে সুকরি দাস জলপাইগুড়িতে ফিরেছেন। দীর্ঘদিন কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। হাসপাতাল থেকে ছুটির পর প্রথমে কৃষ্ণনগরের একটি হোমে ছিলেন তিনি। মাস সাতেক আগে জলপাইগুড়িতে ফেরেন।
ফিরেই তাঁর ছেলেমেয়ের খোঁজ করতে শুরু করেন সুকরি। লিখিত আবেদন জানান জেলা শিশুকল্যাণ সমিতি তথা সিডব্লিউসির কাছে। আবেদনের ভিত্তিতে খোঁজখবর করতে গিয়ে শিশুকল্যাণ সমিতি জানতে পারে, সুকরির বড় ছেলে হোমে রয়েছে। কিন্তু মেয়েটিকে দত্তক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি শিশুকল্যাণ সমিতির তরফে দাবি করা হয়েছে, দত্তকের বিষয়ে কর্তাদের কিছু জানা নেই। যদিও সরকারি নথি অনুযায়ী, মেয়েটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছে শিশুকল্যাণ সমিতি। এ বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান দেবাশিস মজুমদার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে চিঠি চালাচালি হয়েছে। অফিসে গিয়ে কাগজ দেখে বিস্তারিত বলতে পারব। তবে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে অনলাইনে জানিয়ে এক জেলার শিশুকে অন্য জেলা থেকে দত্তক দেওয়া যায়।”
প্রশ্ন, শিশুর কোনও অভিভাবক জীবিত এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকলে তাঁকে না জানিয়ে দত্তক দেওয়া যায়? আইনজীবীদের একাংশের দাবি, কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তা হলে সুকরির অভিযোগের ভিত্তিতে কেন তদন্ত হবে না, সে প্রশ্নও উঠেছে। জলপাইগুড়ি শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বেবি উপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ সুকরি বলেন, “মেয়েটার এখন ৬ বছর বয়স, ছেলেটাও কত বড় হয়ে গিয়েছে। ওরা কোথায় জানি না। কেন আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তাও জানি না। প্রতিদিন একবার করে অফিসে গিয়ে খোঁজ করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy