Advertisement
E-Paper

দুর্ভোগে এ বার বাড়ছে ক্ষোভ

নোট জোগাড় করতে ব্যাঙ্ক-এটিএমের রোজকারের দুর্ভোগে জমা হওয়া ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ব্যাঙ্ক লেনদেনে বিধি নিষেধের জেরে শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা জলপাইগুড়িতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকরা।

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫১
ফালাকাটার ব্যাঙ্ক রোডে টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ লাইন। বুধবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

ফালাকাটার ব্যাঙ্ক রোডে টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ লাইন। বুধবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

নোট জোগাড় করতে ব্যাঙ্ক-এটিএমের রোজকারের দুর্ভোগে জমা হওয়া ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ব্যাঙ্ক লেনদেনে বিধি নিষেধের জেরে শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা জলপাইগুড়িতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকরা। লাইন দিয়েও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পেরে অসম সীমানা ঘেঁষা আলিপুরদুয়ারেও পথ অবরোধ করেছে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। পরিকল্পনা ছাড়া নোট বাতিলের সিদ্ধান্তও নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। গত মঙ্গলবার একটি পোস্ট অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন গ্রাহকদের একাংশ। কোচবিহারের একটি ব্যাঙ্কের শাখার ম্যানেজারকে ঠায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল ফুটপাতে। এ দিন বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ পোস্ট অফিস থেকে টাকা তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু ব্যাঙ্কেও দু’হাজারের বেশি টাকা দেয়নি গ্রাহকদের।

অবরোধে চা শ্রমিকরা

পাক্ষিক মজুরি দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলাভ্যালি চা বাগানে। গত ২৯ অক্টোবরের পরে শ্রমিকদের মজুরি হয়নি। প্রতি দিনই মজুরির খোঁজে গেলে শ্রমিকরা শুনেছেন, ‘‘কালকে হবে।’’ প্রতি দিনের আশ্বাসে ভরসা রাখতে না পেরে জাতীয় সড়কই অবরোধ করলেন চা শ্রমিকরা। বুধবার সকাল দশটা থেকে অসম মোড়ে জাতীয় সড়কের ওপরে বসে পড়েন চা শ্রমিকরা। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা৷ তীব্র যানজট শুরু হয় জাতীয় সড়কে। অবরোধের আগে এ দিন সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে বাগান ম্যানেজারকে ঘেরাও করে রেখেছিলেন শ্রমিকরা। অবরোধ চলার সময়ে জাতীয় সড়কের দু’দিকে দাড়িয়ে পড়ে শ’য়ে শ’য়ে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি৷ ছাড় দেওয়া হয় শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুল বাসকে৷ প্রশাসনের কর্তারা বারবার আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি৷ পুলিশ অফিসারদের অনুরোধে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান, তাহলে কিছু খেতে পাব। মজুরি ছাড়া বাড়িতে তো খাওয়াই জুটছে না।’’ ফুলবাড়ির বাসিন্দা শংকর দাস বলেন, ‘‘আগে লাইন দিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, এখন নোটের জেরে যানজটে আটকে দুর্ভোগ পোহাতে হল।’’ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘করলাভ্যালি সহ অনান্য বাগানের শ্রমিকদের মজুরি দিতে দ্রুত পদক্ষেপ হবে।’’ তবে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও এ দিন জলপাইগুড়ির চা শ্রমিকদের কথা উঠে এসেছে।

রাস্তা আটকে বিক্ষোভ

ক্ষোভের জেরে অবরোধ হল আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়িতেও। সলসলাবাড়িতে একটি মাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। এ দিন সকাল সাড়ে দশটার সময় শামুকতলা-আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কে বসে পড়েন গ্রাহকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গত শনিবার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও টাকা মেলেনি। প্রতিদিন মাত্র ১০০ জনকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ দিন ধৈর্য রাখতে নমা পেরে রাস্তাতেই বসে পড়েন নৃপেণ বর্মন, পরিতোষ বর্মনরা। দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অবরোধ চলে। যার জেরে আলিপুরদুয়ার থেকে অসমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে ওই সময়ে। পরে অবশ্য ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। তাতেও কতটা দুর্ভোগ কমবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের। আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কানাই সরকার। পেশায় দিন মুজুর। আগামী ৯ ডিসেম্বরে মেয়ের বিয়ে। বিয়ের খরচের জন্য জীবনবিমা থেকে ঋণ নিয়েছেন। ১৫ দিন আগে চেক জমা দিলেও সে টাকা নগদে পাচ্ছেন না। প্রতিদিন ব্যাঙ্কে হন্যে হয়ে পড়ে থাকলেও টাকা পাওয়ার কোন আশ্বাস পাচ্ছেন না। কানাইবাবু বলেন, ‘‘সরকার বিয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেবে বলেছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পাইনি। নির্দেশ-ব্যাঙ্ক জানি না, শুধু জানি টাকা না পেলে মেয়ে ছাঁদনাতলায় বসতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’’

সীমাও কমছে

অর্থের অভাবে ব্যাঙ্ক এটিএমে গ্রাহকদের সমস্যা অব্যাহত শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে৷ এ দিনও অনেক ব্যাঙ্কই টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমা আরও কমিয়ে দেয়৷ বেশিরভাগ এটিএমে একশোর নোট না মেলায় সমস্যায় পড়েন প্রচুর গ্রাহক৷ স্টেট ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি মেন শাখায় মঙ্গলবার নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা তুলতে পেরেছিলেন গ্রাহকরা৷ এদিন সেই সীমা কমিয়ে এক হাজার করে দেওয়া হয়৷ তবে কিছু কিছু ব্যাঙ্কে অবশ্য তার থেকে বেশি টাকা দেওয়া হয়৷ শিলিগুড়ির বেশির ভাগ এটিএম থেকে এ দিনও দু’হাজার টাকা বের হয়েছে। খুচরো নিয়ে এ দিনও সমস্যায় নাকাল হতে হয়েছে। শিলিগুড়ির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ঘুম থেকে উঠেই টাকার চিন্তা শুরু হয়। বেশিদিন এমন চললে তো প্রেসারের অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ব।’’

commoners anger demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy