পুজো করে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়বে রূপালি (নাম পরিবর্তিত), শুনে প্রথমে অনেকের চমক লেগেছিল। অবাক হয়ে কেউ বলেছিলেন, “রূপালি মন্ত্র জানে?” একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রূপালির উত্তর ছিল, “বই দেখে মন্ত্র পড়ব।” রূপালিকে কখনও-সখনও হিজাব পরতে, রোজা রাখতে দেখেই অভ্যস্ত সকলে। তাই অনেকে অবাক হয়েছিলেন। তবে রূপালির উৎসাহ দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে এখন সকলেই তার সঙ্গে লেগেছে পুজোর কাজে। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে লক্ষ্মীপুজো। অনাথ এবং ঘরহারা নাবালিকাদের আশ্রয় এই হোমে লক্ষ্মীপুজো হয়। আয়োজনের সবটাই সারে আবাসিক মেয়েরা।
এ বারে পুজোর ভার রূপালির উপরে। রূপালি নিজেই পুজো করতে চেয়েছে। হোমের পুজোয় পুরোহিত ডাকা হয় না। বাড়ি-হারানো অথবা বাড়ি থেকে দূরে থাকা, অনাথ মেয়েদের পুজো করতে দেওয়া হয়। এক জন মন্ত্র পড়ে, তার সঙ্গে সকলে অঞ্জলি দেয়। কেউ লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ে। এটাই হোমের রীতি। হোমের অন্যতম পরিচালক দীপশ্রী রায় বলেন, “মেয়েরা নিজেরাই পুজো করে। ওরাই লক্ষ্মীর পা আঁকে, আলপনা দেয়। এ বছর রূপালি বলল, ওই পুজো করবে, পাঁচালি করবে। এখানে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ নেই। সবাই এক সঙ্গে ইদ, বড়দিনও পালন করে।”
রূপালি ছোট থেকেই হোমে। এখন সে একাদশ শ্রেণি। তার সঙ্গে পুজোর জোগাড় করছে আরও দুই আবাসিক। রিঙ্কি এবং বুবলি (দু’জনেরই নাম পরিবর্তিত)। এক জনের মা প্ল্যাটফর্মে থাকতেন, ভবঘুরে। আর এক জনকে স্টেশন থেকে খুঁজে পেয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সে বাড়ির কথা বলতে পারেনি আজও। দু’জনেই স্কুলে পড়ে। ওরাই লক্ষ্মীর সিংহাসন সাজানো থেকে শুরু করে ফুল-বেলপাতা আনা, ফল কাটার কাজ করছে। রূপালি বলে, “আমার পুজো দেখতে ভাল লাগে। তাই আমি নিজেই পুজো করতে চাইলাম। সকলেই রাজি হয়ে গেল। ওদেরও কারও মনে হয়নি মুসলিম মেয়ে কি পারবে পুজো করতে!”
বুধবার দুপুরে হোমে নাড়ু তৈরি করছিল মেয়েরা। ভোগের পোলাও রান্নার চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে ব্যস্ত অনেকে। নবম শ্রেণির ছাত্রী বুবলি মালা গাঁথছিল। সে বলল, “রূপালি মুসলিম তাতে কী! আমরা সর্বক্ষণ এক সঙ্গে এখানেই থাকি। ওর বাড়ি নেই, আমারও বাড়ির কথা মনে নেই। আমরা সবাই একই রকম, কেউ আলাদা নয়!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)