Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মালবাজার

মানসিক নির্যাতনের নালিশ অধ্যক্ষার

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির সদস্য তথা পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুললেন মালবাজারের পরিমল মিত্র স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষা উমা মাজী। তিনি গোটা বিষয়টি রাজ্যের মহিলা কমিশনে এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৭
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির সদস্য তথা পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুললেন মালবাজারের পরিমল মিত্র স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষা উমা মাজী। তিনি গোটা বিষয়টি রাজ্যের মহিলা কমিশনে এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জানিয়েছেন।

অধ্যক্ষার অভিযোগ, দেবকুমারবাবু তাঁর স্ত্রীকে প্রায় তিরিশ বছর কলেজের টিচার ইনচার্জ পদে বসিয়ে চক্র চালাচ্ছিলেন। কলেজে জেনারেটর সারানো, ক‌্যামেরা কেনা নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে। তিন বছর অডিট হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে কলেজে কোনও উন্নয়ন কাজ হচ্ছিল না। কলেজের জমির খতিয়ান নেই। গত ৩০ বছর অধিকাংশ সময় দেবকুমারবাবুর স্ত্রী নন্দিতা দেবী কলেজের টিচার ইনচার্জ ছিলেন। ২০১৫ সালের ২ জুলাই অধ্যক্ষা হিসাবে উমাদেবী যোগ দেন। নন্দিতাদেবীর হাত থেকেই দায়িত্ব নেন। সেই থেকে অনিয়ম বন্ধ করে কলেজে উন্নয়ন কাজের চেষ্টা করছেন বলে দাবি অধ্যক্ষার। অথচ দেবকুমারবাবু তাঁকে সরাতে নানা ভাবে চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির সদস্য হওয়ায় দেবকুমারবাবু নিজের প্রভাব খাটাচ্ছেন। উমাদেবীর নামে অভিযোগ করিয়েছেন। দেবকুমারবাবুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ ওই কলেজে উমাদেবীর বিরুদ্ধেই তদন্ত কমিটি পাঠাতে উদ্যোগী। নানা ভাবে কলেজ অচল করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এমনকী উমাদেবীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

দেবকুমারবাবু বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। এসবের কী কোনও প্রমাণ রয়েছে? তা ছাড়া আমি ওই কলেজে যাই না। সেখানকার পরিচালন কমিটিতেও নেই। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুললেই তো হল না। উনি যে অভিযোগ তুলেছেন তার প্রমাণ দিতে হবে। না হলে মানহানির মামলা করব।’’ তাঁর স্ত্রী নন্দিতাদেবী জানান, উমাদেবী যে অভিযোগ করছেন তা ঠিক নয়। তা ছাড়া নন্দিতাদেবী কলেজের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন বলে দাবি করেন।

উমাদেবীর অভিযোগ, স্ত্রীকে টিচার ইনচার্জ পদে বসিয়ে উন্নয়ন কাজের নামে টাকা আত্মসাৎ করতে সচেষ্ট দেবকুমারবাবু। অন্য কেউ অধ্যক্ষ হলে তাঁকে বেশি দিন টিকতে দেন না তিনি। গত ৪ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী কলেজে আসবেন দেখে উমাদেবী জরুরি ভিত্তিতে পরিচালন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ভবন রং করান। প্রশাসনিক ভবন সংস্কার হয়। সব মিলিয়ে ২২ লক্ষ টাকার কাজ হয়। মুখ্যমন্ত্রী কলেজে ঘুরে প্রশংসা করেছেন। বিজ্ঞান ভবনের জন্য ১ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ দিয়েছেন। ওই কাজের প্রক্রিয়া শুরু করলে অভিযোগ তোলেন দেবকুমারবাবু। দেবকুমারবাবুর কথায়, ‘‘কলেজের পরিচালন কমিটির সদস্যদের একাংশ মালবাজার কলেজের বিভিন্ন কাজে অনিয়ম নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কর্ম সমিতির সদস্য হিসাবে আমি তা উপাচার্যের কাছে পাঠিয়েছিলাম।’’

উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘দেবকুমারবাবু ওই কলেজের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতে কর্ম সমিতিতে আলোচনা করে ‘ফ্যাক্ট ফাউন্ডিং’ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষাকে মানসিক হেনস্থা করেছি বলে অভিযোগ কেন তুলছেন জানি না। তিনি বলতেই পারেন। তবে অধ্যক্ষাকে সাহায্য করাই আমার উদ্দেশ্য। যাতে তিনি সঠিক ভাবে কলেজ চালাতে পারেন।’’

উমাদেবীর অভিজ্ঞতা, দেবকুমারবাবুর করা অভিযোগ নিয়ে উপাচার্য ফোন করে কাগজপত্র চান। উমাদেবী লিখিত ভাবে তা জানাতে অনুরোধ করলে অভিযোগ, উপাচার্য তাঁকে ‘আপনাকে কী করতে পারি জানেন’ বলে হুমকি দেন। উমাদেবীর অভিযোগ, ৩১ মার্চ কলেজের পরিচালন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ৪ মার্চ নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। উপাচার্য ২ মার্চ চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত দুই সদস্যর নাম দিয়ে দ্রুত পরিচালন কমিটি গঠন করতে বলেন। ভোট ঘোষণা হওয়ায় তা করা যাবে না বলে মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানালে পুরনো কমিটির মেয়াদ বাড়াতে উপাচার্য়ের কাছে আবেদন করেছিলেন। কেননা, কমিটি না থাকলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন আটকে যাবে। উপাচার্য ফোনে জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে কমিটি না করলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এর পর উচ্চ শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানান উমাদেবী। উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয় জুলাই পর্যন্ত মালবাজারের ওই কলেজের পরিচালন কমিটির মেয়াদ বাড়াতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE