Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পুলিশকে নালিশে গণধর্ষণ

ছেলেকে মারধর করায় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক বধূ। পুলিশ অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে গ্রেফতারও করেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

ছেলেকে মারধর করায় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক বধূ। পুলিশ অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে গ্রেফতারও করেছিল।

তার পরেই পুলিশে অভিযোগ জানানোয় ‘শাস্তি’ দিতে দলবল নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে ওই বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিবেশী সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে।

মালদহের রতুয়া থানার তারানগর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘটনার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ওই নির্যাতিতা। মঙ্গলবার সুস্থ হয়েই গণধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ওই বধূ। বৃহস্পতিবার রাতেই প্রতিবেশী এক মহিলা অবশ্য ওই বধূকে মারধর-সহ নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। ওই ঘটনায় মামলা হলেও ছয় অভিযুক্তের কাউকেই অবশ্য এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে
জানা গিয়েছে।

চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর ছাড়াও ৩৫৫ ডি ধারায় মামলা করে পুলিশ তদন্ত করছে। মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। আর অভিযুক্তদের ধরতে সব রকম চেষ্টা চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই বধূর স্বামী সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের বাড়ি ছিল রতুয়ার বান্ধাকুড়ি এলাকায়। সেখান থেকে কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। বাড়িতে নাবালক তিন ছেলেকে নিয়ে থাকেন ওই বধূ। মাসখানেক আগে বছর দশেকের বড় ছেলেকে প্রতিবেশী মহম্মদ সাকিম বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ।

এর পর বধূ পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পর গ্রেফতারও হয় ওই প্রতিবেশী। কিন্তু অভিযোগ, জামিন পেয়ে ফেরার পর থেকেই বধূকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে ওই প্রতিবেশী। তারপর গত বৃহস্পতিবার সকালে সাকিম বধূর বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ, তার সঙ্গে ছিলেন ভাই মহম্মদ মকিম ও ভাইপো হারুণ শেখ, ফারুখ শেখ, তানভির শেখ ও ফিটু আলি। বধূ যাতে চিত্কার করতে না পারে সে জন্য তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়।

তার পর বেধধড়ক মারধর সহ তার উপরে নির্য়াতন চালানো হয় বলে অভিযোগ। ওই সময় বধূর দুই নাবালক ছেলে বাড়িতে ছিল না। কোলের নয় মাসের শিশু ঘুমিয়ে ছিল।

সকালে নির্যাতনের সময় ঘটনাক্রমে সৌদি আরব থেকে স্ত্রীকে ফোন করেন স্বামী। কিন্তু একাধিকবার ফোন করেও না পেয়ে এক প্রতিবেশী মহিলাকে ফোন করে স্ত্রীর খোঁজ নিতে বলেন তিনি। ওই মহিলা বধূর বাড়িতে যেতেই অভিযুক্তদের পালিয়ে যেতে
দেখেন তিনি।

এর পর অচেতন অবস্থায় রক্তাক্ত বধূকে উদ্ধার করে রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে প্রতিবেশী প্রত্যক্ষদর্শী ওই মহিলাই পুলিশে অভিযোগ জানান।

প্রতিবেশী ওই মহিলা জানান, ‘‘আমি বাড়িতে যেতেই অভিযুক্তদের পালিয়ে যেতে দেখি। ঘটনাক্রমে ওর ১০ বছরের ছেলেও ওই সময় বাড়িতে এসে ঢোকে। সেও অভিযুক্তদের পালাতে দেখেছে। ঘরে ঢুকেই দেখি ওই বধূ অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে। যা দেখেছিলাম তাই পুলিশকে জানিয়েছিলাম।’’

ওই বধূ এ দিন অনেকটাই সুস্থ। রতুয়া হাসপাতালে বধূ জানান, ‘‘ছেলেকে মারধরের অভিযোগ জানানোর পর থেকেই ওরা আমাকে চরম শাস্তি দিবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিত। কিন্তু একা পেয়ে এমন করবে ভাবতেও পারিনি। ওদের চরম শাস্তি চাই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই অভিযোগ জানাব।’’

যদিও অভিযুক্তদের তরফের এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘ওই বধূ বারবার মিথ্যে অভিযোগ করছেন। আগেও মারধরের মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো নিয়ে বাড়িতে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এর বেশি কিছু হয়নি। এ বারও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gangrape complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE