শিলিগুড়ির হাসমিচক লাগোয়া বিধান রোডের বিতর্কিত বাণিজ্যিক বহুতল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যের পুর দফতরের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের পুর দফতর তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তবে ওই নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে কি না, পুরসভার তরফে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তা নিয়েই গুঞ্জন শুরু হয়েছে শাসক দলের অন্দরেই। মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘পুর দফতর থেকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে তা পেশ করা হবে।’’
মাস কয়েক আগে শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে ওই নির্মীয়মাণ বাড়ির নকশা পুনর্নবীকরণের জন্য পেশ করা হলে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। নিয়ম মাফিক নির্দিষ্ট সময়ে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হলে নকশা নবীকরণের মেয়াদ থাকে। তা পেরিয়ে গেলেও কী ভাবে পাশ করানো হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস কাউন্সিলরদের তরফেও আপত্তি জানানো হয়। প্রশ্ন ওঠায় মেয়র জানান, এই নকশার অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, পুর দফতরের কাছে ফাইল পাঠানো হবে। সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই নির্মাণে সম্মতি দিলে এখনও আপত্তির কথা জানিয়েছেন রঞ্জন। তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলরেরও আপত্তি রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাম জমানায় অশোক ভট্টাচার্য পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকার সময় পার্কিং ব্যবস্থা গড়তে রেলের কাছ থেকে ওই জায়গায় অল্প মূল্যে কেনা হয়। কিন্তু পরে সামান্য পার্কিং দেখিয়ে পিপিপি মডেলে বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শহরের ওই জায়গায় বাণিজ্যিক ভবন হলে যানজট বাড়বে বলে কংগ্রেস, তৃণমূলের তরফে আন্দোলনও হয়। পুরসভার তখন বিরোধী তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, তারা ক্ষমতায় এলে এই নির্মাণ মানুষের স্বার্থে ভেঙে দেবেন। এমনকী পুরভোটে তাদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে এটিও অন্যতম ছিল। পরবর্তীতে ওই নির্মাণের সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলেও স্বীকার করেন অশোক ভট্টাচার্য। ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডে নির্মাণকারী সংস্থা নকশা পুনর্নবীকরণের আবেদন করে। এমনকী নকশা অনুমোদনের আগে অবৈধ ভাবে কাজ শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে পুরসভা তা বন্ধ করায়।
এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান দিলীপ দুগার বলেন, ‘‘সিপিএমের জমানায় ওই জায়গায় এই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত খুবই ভুল হয়েছে। ওই বাণিজ্যিক ভবন হলে শহর রুদ্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।’’ পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মেয়র পারিষদের বৈঠকে বিষয়টি পেশ করার কথা উঠলে তৃণমূল কাউন্সিলরদের আপত্তিতে তা আনা হয়নি। সিপিএমের পুরসভার পরিষদীয় নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে এই নির্মাণ তারা ভেঙে দেবে। এখন এটাকেই অনুমতি দিতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)