নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের এই কামরাতেই সোমবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ পারমার। কামরাটিকে আপাতত এনজেপি স্টেশনে আলাদা ভাবে রাখা হয়েছে। ছবি: স্বরূপ সরকার
নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের কামরায় কী ভাবে গুলি চলল এবং প্রাক্তন সেনা জওয়ান মারা গেলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারল না রেল পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে একটি গোলমালের ঘটনা সামনে এসেছে। তাতে সহযাত্রীদের সঙ্গে মৃতের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু রেল এবং রেল পুলিশ আত্মহত্যার দিকে বার বার ইঙ্গিত করলেও মঙ্গলবার মৃতের পরিবারের তরফে তা খারিজ করে খুনের তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ সাহুডাঙ্গির কাছে ওই ট্রেনের জেনারেল কামরায় চেপে অসমের রঙ্গিয়া থেকে কানপুর যাচ্ছিলেন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ পারমার (৪০)। পুলিশ সূত্রে দাবি, ট্রেনটি সাহুডাঙ্গির কাছে আসতে ওই কামরায় তিন বার গুলির শব্দ পাওয়া যায়। যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। পরে সঞ্জয়ের দেহ মেলে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রেল পুলিশের দাবি, সঞ্জয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পিস্তল থেকে তিন রাউন্ড গুলি চলে এবং তার একটি লেগেই মারা যান তিনি। কামরার এক সহযাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলাও করা হয়। কিন্তু কী ভাবে চলল গুলি?
রেল পুলিশের দাবি, সঞ্জয় উপরের আসনে বসে মদ্যপান করছিলেন এবং তাতে বাকি যাত্রীরা আপত্তি তোলেন। কয়েক জন ওই আসনে বসতে গেলে পুরোটাই দখল করে রাখেন সঞ্জয়। তা নিয়ে ঝামেলা শুরু হলে গুলিভরা পিস্তল বার করে যাত্রীদের তিনি ভয়ও দেখান বলে কিছু রেলযাত্রীর অভিযোগ। তখনই হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ই কি এলোপাথাড়ি গুলি চলে এবং তারই একটি সঞ্জয়ের দেহে ঢোকে, না কি অন্য কিছু ঘটেছিল, সে অংশটুকু নিয়ে এখনও অন্ধকারে রেল পুলিশ।
ঘটনার খবর পেয়ে এ দিন মধ্যপ্রদেশ থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছয় সঞ্জয়ের পরিবার। এ দিন তাঁর ভাই রাজেশ সিংহ পারমার বলেন, “আরপিএফ ফোনে ঘটনার কথা জানায়। অবসর নেওয়ার পরে, অসমের কামাখ্যায় এক প্রোমোটারের দেহরক্ষীর কাজ করছিলেন দাদা।’’ তিনি জানান, সঞ্জয় বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। রাজেশের বক্তব্য, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। দাদা আত্মহত্যা করতে পারেন না। ওঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।’’
ময়না-তদন্তের পরে, এ দিন দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোমবার রাতেই অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। শিলিগুড়ি রেল পুলিশ সুপার সেলভা মুরুগন বলেন, ‘‘কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রাক্তন ওই সেনাকর্মী মদ্যপ অবস্থায় ট্রেনে ঝামেলা করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেওয়া হয়েছে।’’ তদন্তকারীরা ঘেঁটে দেখতে চাইছেন, প্রাক্তন জওয়ানের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি না। প্রাপ্ত সব নথি যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান আধিকারিকেরা। ট্রেনে ধস্তাধস্তির সময় কেউ বা কারা তাঁকে ওই পিস্তলেরই মুখ ঘুরিয়ে গুলি করে কামরা থেকে নেমে গিয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy