Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Maldah

Malda: বালির বস্তায় মানবে বাঁধ?

এক বছর আগেও রঙ্গিলার পরিস্থিতি এমন ছিল না। গঙ্গার পাড়ে চিনাবাজারে চারটে পাকা ঘর ছিল।

এই ভাবেই দিনের পর দিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে জমি।

এই ভাবেই দিনের পর দিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে জমি। — নিজস্ব চিত্র।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ০৮:১৮
Share: Save:

তখন দুপুর ১টা। ঘরের সামনে জীর্ণ একটি খাটিয়ায় বিবর্ণ মুখে বসে বছর বাষট্টির রঙ্গিলা বেওয়া। ঘর বলতে, গ্রামেরই বাসিন্দা এনামুল হকের আম বাগানের এক ফালি অংশে ছেঁড়া ত্রিপলের ছাউনি আর খড়ের বেড়া দেওয়া ছোট্ট একটি আস্তানা। গত বছর গঙ্গায় ভিটেমাটি হারানোর পরে, এখন অন্যের জমিতে এই একটি ঘরেই ছেলে সফিকুল, বউমা ও দুই নাতনিকে নিয়ে বাস চিনাবাজারের বাসিন্দা রঙ্গিলার। বৃষ্টি হলেই ঘরের ছাউনির ছেঁড়া ত্রিপলের অংশ দিয়ে ঝর ঝরিয়ে করে জল পড়ে। আবার রাতে সেই ছেঁড়া অংশ দিয়ে ঘরে ঢোকে চাঁদের আলোও।

অথচ, এক বছর আগেও রঙ্গিলার পরিস্থিতি এমন ছিল না। গঙ্গার পাড়ে চিনাবাজারে চারটে পাকা ঘর ছিল। প্লাস্টার না থাকলেও ইটের গাঁথনির ঘর ছিল সব। ছিল পাকা রান্নাঘরও। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ গঙ্গার ভাঙনে চারটে পাকা ঘরই ধসেছে। কিছু আসবাব আর জীবন বাঁচাতে পেরেছেন রঙ্গিলা। তার পর থেকে চিনাবাজারেরই এক প্রান্তে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। রঙ্গিলার আফসোস, চিনাবাজারের গঙ্গার ভাঙেন দুর্গত অনেকেই পুনর্বাসন হিসেবে সরকারের থেকে বীরনগর ফুটবল মাঠে জমির পাট্টা পেলেও তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যদের কপালে একটিমাত্র ত্রিপল ছাড়া, আর কিছু জোটেনি!

চিনাবাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভাটিতে মুকুন্দটোলার বাসিন্দা শরৎ ঘোষের ভিটেমাটি হারানোর কাহিনিও প্রায় এক। বাড়ির কাছেই বোল্ডার বাঁধানো মার্জিনাল গঙ্গা বাঁধ থাকায় দেড় বছর আগে বেশ স্বস্তিতেই মুকুন্দটোলায় পুরনো বাড়ির পাশে পাঁচটি পাকা ঘর দিয়ে নতুন একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন শরৎ। কিন্তু এমনই কপাল, যে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গৃহ প্রবেশের আগেই মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে নতুন ওই বাড়ি যেমন গঙ্গায় বিলীন হয়, তেমনই পুরনো বাড়িও গঙ্গা গ্রাস করে। সেই থেকে মুকুন্দটোলার কীর্তনের মাঠেই পুরনো কিছু অ্যাসবেস্টসের চাল ও দরমার জরাজীর্ণ বেড়ার ঘরে পাঁচ জনের পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করছেন তিনি। তাঁরও আক্ষেপ, তাঁদের সঙ্গেই ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো প্রতিবেশীদের অনেকেই ভাঙাটোলায় সরকারের তরফে পুনর্বাসনে জমির পাট্টা পেয়েছেন। তবে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও তাঁদের কপালে জমি জোটেনি বলে তাঁর দাবি।

জমির পাট্টা না মেলা ভাঙন-পীড়িতের তালিকা এখানে দীর্ঘ। যেমন, মুকুন্দটোলারই দীনবন্ধু ঘোষ, অনন্ত ঘোষ, জয়ন্ত ঘোষ, উত্তম মণ্ডল, সঞ্জয় মণ্ডলের মতো এমন অনেকেই জমির পাট্টা পাননি। ফলে, তাঁরাও ভিটেমাটি হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কোনও রকমে মাথা গোঁজার অস্থায়ী একটা আস্তানা করে আছেন।

এ দিকে, গঙ্গার জল বাড়তেই রঙ্গিলা, শরৎরা ভাঙনের ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখতে পাচ্ছেন। অস্থায়ী আস্তানায় কি থাকতে পারবেন? এই চিন্তাই তাঁদের। ভীমাগ্রাম থেকে চিনাবাজার হয়ে মুকুন্দটোলা পর্যন্ত ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু তাতে আস্থা নেই তাঁদের। তাঁরা বলেন, ‘‘যেখানে পাথরের তৈরি ভাঙন প্রতিরোধের কাজকে গঙ্গা দুমড়ে-মুচড়ে গিলে নিল, সেখানে বালির বস্তা কী ভাবে গঙ্গার ভাঙন রুখবে?’’ গত কয়েক বছরে ভিটেমাটি হারিয়ে জেরবার পারলালপুর, গোলাপমণ্ডলপাড়া বা গোপালপুর বা সকুল্লাপুরের দুর্গতদের মুখেও একই কথা। গঙ্গার জল বাড়তেই আতঙ্ক গ্রাস করে রেখেছে রতুয়ার জঞ্জালিটোলা থেকে মানিকচক হয়ে কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর পর্যন্ত গঙ্গার ৬৫ কিলোমিটার এলাকায় পাড়ের বাসিন্দাদের। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maldah River Erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE