Advertisement
E-Paper

যুদ্ধে রয়েছি, আত্মীয়কে আশ্বাস ডাক্তার-পুলিশের

যাঁরা সুস্থ তাঁদের বাড়ি ফিরে ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের জ্বর বা অন্য উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের রক্তপরীক্ষা করার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৬
পরীক্ষা: ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের থার্মাল স্ক্রিনিং চলছে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা: ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের থার্মাল স্ক্রিনিং চলছে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের সামনে লম্বা লাইনে নানা বয়সের কয়েকশো মানুষ। প্রত্যেকেই ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিক। তাঁদের একের পর এক ‘স্ক্রিনিং’ করে চলেছেন চিকিৎসক অমলকৃষ্ণ মণ্ডল, ছোটন মণ্ডল, শুভেন্দু ভক্ত। সঙ্গে রয়েছেন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা।

যাঁরা সুস্থ তাঁদের বাড়ি ফিরে ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের জ্বর বা অন্য উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের রক্তপরীক্ষা করার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের সহযোগিতা করে চলেছেন পুলিশকর্মীরা।

পরীক্ষা করতে গিয়ে সকাল গড়িয়ে দুপুর। তবু লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠল এক চিকিৎসকের। তাঁকে বলতে শোনা গেল— ‘‘চিন্তা করো না। বিপদ সবার। আমরা নিজেরাও বাঁচতে চাই। অন্যদেরও বাঁচাতে চাই।’’ উদ্বেগ তবু কমে না অন্যপ্রান্তের। তিনি এ বার বলেন, ‘‘যুদ্ধ বাঁধলে কোনও সৈনিক কি গুলি খেয়ে মরার ভয়ে পালিয়ে আসবে। আমরাও যুদ্ধ করছি। তোমরা সাবধানে থেকো।’’ ফোন ছেড়েই তিনি ফের হাঁক দেন, ‘‘নেক্সট’’।

সোমবারের এমনই ছবি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের। প্রতি দিন শয়ে শয়ে শ্রমিক ফিরেছেন বাড়িতে। তাঁরাই এখন প্রশাসনের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শুধু হরিশ্চন্দ্রপুরেই এ দিন সাতশো শ্রমিককে পরীক্ষা করা হয়েছে। তা ছাড়া হাসপাতালে অন্তর্বিভাগের রোগীরা তো রয়েইছেন। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নাওয়া-খাওয়ারও সময় প্রায় নেই।

এই ছবি শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের নয়। চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, রতুয়া, সামসি, আড়াইডাঙ্গা হাসপাতাল—সর্বত্রই প্রায় একই রকম। রবিবার ছিল জনতা কার্ফু।

এ দিন বিকেল থেকে শুরু হচ্ছে ‘লকডাউন’। কিন্তু ছাড় নেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে পুলিশকর্মীদের। যাঁদের সব বিপদ উপেক্ষা করেই কাজ করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মীদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু করোনা নিয়ে সাম্প্রতিক আবহে তাঁরাই এখন সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষের ‘নয়নমনি’ হয়ে গিয়েছেন।

হরিশ্চন্দ্রপুরের বিএমওএইচ অমলকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘চাকরিজীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। আমাদেরও পরিবার রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তো পালাতে পারি না।’’

হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাসের কথায়, ‘‘আমরা পুলিশ। কোনও কিছুর ভয়ে তো লুকিয়ে থাকতে পারি না।’’ প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ছ’টি ব্লক থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কত শ্রমিক রয়েছেন তার সঠিক হিসেব নেই। কিন্তু সেই সংখ্যা লক্ষাধিক, এমনকি তারও অনেক বেশি হতে পারে। তাঁদের অনেকেই ফিরছেন করোনা-আক্রান্ত কেরল, মুম্বইয়ের পাশাপাশি দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান থেকে। তাঁদের মাধ্যমে যাতে রোগ না ছড়িয়ে পড়ে সেটাই এখন প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ভিন্‌ রাজ্যে থেকে ফেরা শ্রমিকদের হাসপাতালমুখী করতে ব্যস্ত পুলিশ।

চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তাতে তাঁদের নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত সোশ্যাল মিডিয়াও। ফেসবুকে তাঁদের ‘স্যালুট’ জানানোর পাশাপাশি এক নেটিজেনের পোস্ট— ‘‘ওঁরা কী ভাবে কাজ করছে দেখুন। এর পরে স্বাস্থ্যকর্মী বা পুলিশের উপরে হামলার আগে এই দিনগুলোর কথা এক বার ভাববেন।’’ ‘‘সব বাধা পেরিয়ে ফের সুদিন আসবে, আমরা আবার একসঙ্গে বাঁচব’’— মন্তব্য অন্য এক নেটিজেনের।

Coronavirus Health Malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy