Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cow Smuggling

নদীই পাচারের পথ

শুধু তাই নয়, এখন শীতকাল। অভিযোগ ওঠে, এই সময়েই কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে বেশি পাচার হয়। বিশেষ করে, কাঁটাতার নেই এমন সীমান্ত এলাকা শীতকালে পাচারকারীদের কাছে রীতিমতো স্বর্গরাজ্য।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

জয়ন্ত সেন 
মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মালদহের পারলালপুর ঘাট। পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী। কাঁটাতার না থাকায় গঙ্গার এই নদীপথ বরাবরই গরু পাচারের অন্যতম করিডর। তবে, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০১৭ সালের শেষ অবধি এই নদীপথ ধরেই বাংলাদেশে দেদার গরু পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই গরু পাচার কাণ্ডে বিএসএফের কর্তারা পর্যন্ত জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ। গরু পাচার কাণ্ডে মুর্শিদাবাদ জেলার এক ব্যবসায়ী এনামূল হক ও বিএসএফের এক কর্তা সতীশকুমারকে ইতিমধ্যে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই জেরাও করছে।

শুধু তাই নয়, এখন শীতকাল। অভিযোগ ওঠে, এই সময়েই কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে বেশি পাচার হয়। বিশেষ করে, কাঁটাতার নেই এমন সীমান্ত এলাকা শীতকালে পাচারকারীদের কাছে রীতিমতো স্বর্গরাজ্য। মালদহ জেলায় এমন ৪০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে যেখানে এখনও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি। প্রশাসনিক সূত্রে যদিও জানানো হয়েছে, জমি নিয়ে মামলা ও নদী থাকাতেই ওই এলাকা এখনও কাঁটাতারহীন রয়ে গিয়েছে। তবুও এরই মধ্যে‌, রাজনৈতিক নানা পক্ষ প্রশ্ন তুলছে ফাঁকা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ কার্যকলাপ বেড়ে চলা নিয়ে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় কালিয়াচক ৩, ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদহ, হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লক জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। ১৭২ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে কাঁটাতার নেই প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায়। গঙ্গা, টাঙন, পূনর্ভবা, মরা টাঙন, পাগলা নদী যে এলাকায় সেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এ ছাড়া কালিয়াচক ৩ ব্লকের মিলিক সুলতানপুর, শবদলপুর, ইংরেজবাজার ব্লকের মহদিপুরের একাংশ, পুরাতন মালদহ ব্লকের মুচিয়া, হবিবপুর ব্লকের বেলডাঙা, ইটাভাটি, নাঙ্গলডাঙা, যুগিবাড়ি এবং বামনগোলা ব্লকের খুটাদহ গ্রামের একাংশে জমিজটের কারণে বেড়া হয়নি। মিলিক সুলতানপুরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে গ্রামবাসীদের তরফে হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এই কাঁটাতারহীন সীমান্ত দিয়েই বেশি পাচার চলছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে, শীতের কুয়াশার রাতে বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কালিয়াচকের সীমান্ত পথে ওপার থেকে আসে জাল নোট। আর এপার থেকে মূলত গোরু, ফেন্সিডিল এবং নেশার ট্যাবলেট ওপারে যায়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি কেন? জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই কাঁটাতারহীন অংশের মধ্যে গঙ্গা থেকে শুরু করে কয়েকটি নদী রয়েছে। নদীর উপর দিয়ে কখনই কাঁটাতার দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া কিছু এলাকায় কাঁটাতার দেওয়ার সময় জমির মালিকের তরফে মামলা করে দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বেড়া দেওয়া কার্যত অসম্ভব।’’ তবে ওই খোলা সীমান্ত দিয়ে পাচার কি চলবেই? বিএসএফের মালদহ সেক্টরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কাঁটাতারহীন এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারি দেওয়া হয়। জলপথ সীমান্তে স্পিডবোট ও নৌকায় টহলদারি ব্যবস্থা রয়েছে। প্রচুর পাচার সামগ্রী উদ্ধারও হচ্ছে নিয়মিত। তবে পুরো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া হয়ে গেলে পাচারের সমস্যা অনেক কমে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cow Smuggling River route Ganga River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE