Advertisement
১০ মে ২০২৪
Malda

তদন্ত উপলক্ষ করে হাতাহাতি বাধল দু’দলে

‘নির্যাতিতার’ বাড়িতে এ দিন সকাল পৌনে ৮টা এক সদস্যকে নিয়ে পৌঁছন রাজ্যের শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। তিনি নির্যাতিতা ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।

তৃণমূল-বিজেপি নেত্রীদের হাতাহাতি। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল-বিজেপি নেত্রীদের হাতাহাতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৫
Share: Save:

কখনও কেন্দ্র ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের সঙ্গে বচসা, কখনও হাতাহাতিতে জড়ালেন বিজেপি ও তৃণমূলের নেত্রীরা। শনিবার এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মালদহের স্কুলের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ‘নির্যাতিতার’ বাড়ি। যার পাশে দাঁড়াতে দফায় দফায় সংঘাত, সে মেয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকল ঘরে। মেয়ের অবস্থা দেখে বচসা, হাতাহাতি থামাতে হাতজোড় করে আসরে নামেন খোদ নির্যাতিতা ছাত্রীর মা। তিনি বলেন, “ঝগড়া, মারামারি চাই না। মেয়ের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। ঝগড়া, মারামারিতে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছে। মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, শুধু চাই তার বিচার হোক।”

‘নির্যাতিতার’ বাড়িতে এ দিন সকাল পৌনে ৮টা এক সদস্যকে নিয়ে পৌঁছন রাজ্যের শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। তিনি নির্যাতিতা ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। কথা মেটার পরে বাড়ির বাইরে বসেছিলেন সুদেষ্ণা। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এক সদস্যকে নিয়ে ‘নির্যাতিতার’ বাড়িতে পৌঁছে যান জাতীয় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। ‘নির্যাতিতার’ বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে রাজ্য কমিশনের চেয়ারপার্সনকে দেখে, দৃশ্যত মেজাজ হারান তিনি। তিনি সুদেষ্ণা রায়কে বলেন, ‘‘আপনার কাজ হয়ে গিয়ে থাকলে, আপনি চলে যান। এ ভাবে বসে থাকবেন না। তিলজলায় আমাকে তো মার খাওয়ালেন।’’ সুদেষ্ণা বলেন, ‘‘আমার কাজ আপনাদের সহয়োগিতা করা। সেটা আইনেও আছে। সে জন্ই বসে রয়েছি। আপনি আমাকে এ ভাবে চলে যেতে বলতে পারেন না।’’

এর পরে প্রিয়াঙ্ক বাড়িটির বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন তাঁদেদের নির্যাতিতার বাড়িতে ঢুকতে দিতে হবে বলে দাবি করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন বিজেপির স্থানীয় নেতা, নেত্রীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিজেপির দুই বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ও চিন্ময়দেব বর্মণ। সে সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন তৃণমূল নেত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য সাগরিকা সরকার। নির্যাতিতার বাড়ির উঠোনেই দু’পক্ষের স্লোগান, পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। পরে, জাতীয় কমিশনের দলের সঙ্গে নির্যাতিতার ঘরে শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী গেলে, তৃণমূল ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাড়ির বারান্দাতেই হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় দু’দলের নেত্রীদের মধ্যে। বিজেপির উত্তর মালদহ মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ছন্দা সরকারের সঙ্গে কার্যত হাতাহাতি করতে দেখা যায় সাগরিকাকে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি এড়াতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রিয়াঙ্ক বলেন, “রাজ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই রাজ্যের কমিশনের দল তড়িঘড়ি করে হাজির হয়েছে। রাজ্যে গুন্ডাগিরি হয়েছে। গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জানানো হবে।” সুদেষ্ণার পাল্টা দাবি, “জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাজে বাধা দিতে নয়, সহযোগিতার জন্য হাজির হয়েছি। তবে তিলজলার মতো এ দিনও জাতীয় কমিশনের চেয়ারপার্সন আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। রাজনৈতিক দলের নেতা, নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নির্যাতিতার বাড়িতে আসেন।” বিজেপির বিধায়ক শ্রীরূপা বলেন, “জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনে আমি অভিযোগ জানিয়েছিলাম। সে জন্য নির্যাতিতার বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম।”

গত ৮ মার্চ স্কুলের দোতলায় এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশে অভিযোগের ভিত্তিতে তিন অভিযুক্তকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখন তারা জেল হেফাজতে রয়েছে, দাবি পুলিশের। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় নিয়ম মেনেই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ দিন রাজ্য ও জাতীয় দুই কমিশন তাদের কাজ সম্পূর্ণ করেছে।’’

যদিও ঘটনার তিন সপ্তাহ পরে, কেন্দ্র ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগানো হচ্ছে। এ দিন সন্ধেয় নির্যাতিতার বাড়িতে যান কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। তিনি নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি সাহায্যের আশ্বাস দেন। কৌস্তভ বলেন, ‘‘সকাল থেকে দেখছি, কেন্দ্র ও রাজ্যের কমিশন নিজেদের মধ্যে আকচাআকচিতে ব্যস্ত। অথচ, মেয়েটি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করলেন না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Child Welfare Association Crime Against Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE