E-Paper

পর পর ট্রেকারের মৃত্যুতে চিন্তিত প্রশাসন, সান্দাকফু যেতে বাধ্যতামূলক হতে চলেছে ডাক্তারি শংসাপত্র

ভবানীপুরের বৃদ্ধের পরিবারের দার্জিলিং থেকে ধোতরে হয়ে, সান্দাকফু ঘোরার পরিকল্পনা ছিল। সান্দাকফুতে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চলতি বছরেই উত্তর দিনাজপুরের এক যুবক সান্দাকফুতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭
সান্দাকফু ঘোরা বা ‘ট্রেক’ করার জন্য ‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট’ বাধ্যতামূলক করতে চলেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন।

সান্দাকফু ঘোরা বা ‘ট্রেক’ করার জন্য ‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট’ বাধ্যতামূলক করতে চলেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। —ফাইল চিত্র।

গত সপ্তাহে সান্দাকফুতে অসুস্থ হয়ে মারা যান কলকাতার ভবানীপুরের এক বৃদ্ধ। সম্প্রতি এমন ভাবে কয়েক জনের মৃত্যুর পরে সান্দাকফু ঘোরা বা ‘ট্রেক’ করার জন্য ‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট’ বাধ্যতামূলক করতে চলেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের অনুমোদনের পরে জেলা প্রশাসন এবং জিটিএ যৌথ ভাবে সান্দাকফুর জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল সেটি ঘোষণা করবেন বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। জেলাশাসকের সঙ্গে সোমবার বহু চেষ্টাতেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে মহকুমাশাসক (দার্জিলিং সদর) রিচার্ড লেপচা বলেন, “জেলাশাসক নতুন নির্দেশিকা ঘোষণা করবেন। এ বার থেকে পর্যটক বা ট্রেকারদের কথা মাথায় রেখে কিছু নিয়ম চালু হচ্ছে। তাদের মধ্যে প্রধান হল মেডিক্যাল সার্টিফিকেট।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, এলাকায় এসে বা আসার আগে তৈরি ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে সান্দাকফু যাওয়ার পারমিট মিলবে। সার্টিফিকেট নিয়ে সন্দেহ বা পর্যটকের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন দেখা দিলে ফের সরকারি জায়গায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। যদিও ক’দিন আগে পাওয়া সার্টিফিকেট গ্রাহ্য করা হবে, তা এখনও জানা যায়নি। এর বাইরে, সান্দাকফুর মতো উচ্চতায় (৩৬৩৬ মিটার বা প্রায় ১২ হাজার ফুট) কী করণীয় এবং কী করার নয়, সেই বিষয়গুলি নির্দেশিকায় থাকতে পারে। তা নিয়ে প্রচার করার সিদ্ধান্তও রয়েছে।

ভবানীপুরের বৃদ্ধের পরিবারের দার্জিলিং থেকে ধোতরে হয়ে, সান্দাকফু ঘোরার পরিকল্পনা ছিল। সান্দাকফুতে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চলতি বছরেই উত্তর দিনাজপুরের এক যুবক সান্দাকফুতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁরও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছিল। তার আগে, ২০২২ সালে ইজ়রায়েলের এক পর্যটক মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফুতে ‘ট্রেক’ করে রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান।

সান্দাকফুর জন্য মানেভঞ্জন থেকে ‘ট্রেক’ শুরু হয়। ল্যান্ডরোভার গাড়িতে করেও সান্দাকফু যাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা মনে করেন, পাহাড়ের এমন উচ্চতায় উঠে অনেকের শারীরিক সমস্যা হয়। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস জাতীয় রোগ থাকলে সান্দাকফুর মতো উচ্চতায় নানা সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। সেখানে গেলেও ধাপে ধাপে এক-দু’দিন ধারে-কাছে থেকে, শরীরকে মানিয়ে নিয়ে (অ্যাক্লেমাটাইজ়েশন) এগনোই বিধেয়। লাদাখে তেমন বিভিন্ন নিয়ম বাধ্যতামূলক। সান্দাকফুতেও তেমন নিয়ম করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে ওই এলাকায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু পরিকাঠামো গড়াও প্রয়োজন। মানেভঞ্জনে তেমন কিছু নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে সুখিয়াপোখরিতে। সান্দাকফুতে গিয়ে অসুস্থ কাউকে অতি দ্রুত সুখিয়াপোখরিতে নামিয়ে আনতে হলে, দেরি হতে পারে।

পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, “অ্যাডভেঞ্চার-পর্যটনের জন্য কড়া নিয়ম প্রয়োজনীয়। সান্দাকফু অঞ্চলে তা দ্রুত বলবৎ হওয়া জরুরি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sandakphu Medical Certificate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy