দাদার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। সালিশি সভায় সেই দাদাকে না পেয়ে ভাইকে বিয়ের নিদান দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সভার পরে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় ভাই। মঙ্গলবার সকালে তার দেহ মেলে বাড়ির কাছে একটি পুকুরে।
১৬ বছরের খলিলুর ইসলামের মৃত্যুর জেরে উত্তেজনা ছড়ায় রাজগঞ্জের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে এসইউসিআইয়ের স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামীর দিকে। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজগঞ্জ থানাতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেস৷
যে তরুণীর অভিযোগকে ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত তাঁর বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মৃতের এক আত্মীয়ের দাবি, দিন তিনেক আগে ওই দোকানে জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন খলিলুরের দাদা ফরজান আলি৷ সেই সময় ফরজানের সঙ্গে তাঁর মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে বাড়িতে জোর করে তাঁকে আটকে দেন তরুণীর বাবা। কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে যান ফরজান৷
খলিলুরের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, এর পর বিষয়টি নিয়ে সোমবার গভীর রাতে তরুণীর বাড়িতে সালিশি সভা বসানো হয়৷ সভায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কুলসুম বেগমের স্বামী তথা এসইউসিআই-এর নেতা নাসিরুদ্দিন আহমেদ বারবার তরুণীকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন৷ তখন ফরজান অনুপস্থিত দেখে নাসিরুদ্দিন-সহ মেয়ের বাড়ির লোকেরা জানান, ফরজানের ভাই খলিলুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হোক৷ তাতে রাজি না হওয়ায় খলিলুরের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়৷
মৃতের পরিবারের দাবি, ‘‘আমরা জরিমানা দিতে রাজি হয়ে যাই৷ কিন্তু তার পরেও তাঁরা খলিলুরকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন৷ কিন্তু আমরা রাজি হইনি৷’’
সালিশি সভা শেষ হতেই খলিলুর নিখোঁজ হয়ে যায়৷ রাতভর অনেক খুজেও তাকে পাওয়া যায়নি৷ এ দিন বেলা দশটা নাগাদ বাড়ির কাছে একটি পুকুর থেকে তার দেহটি উদ্ধার হয়৷ তার বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, দেহ উদ্ধারের সময় তার কানে ও মুখে রক্ত ছিল৷ তাঁদের সন্দেহ, খুন করা হয়েছে খলিলুরকে।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমবার ওখানে একটা সালিশি সভা হয়েছিল বলেও আমরা শুনেছি৷ কিন্তু সালিশিতে ঠিক কী হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ মৃত কিশোরের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’ নাসিরুদ্দিন আহমেদের দাবি, ‘‘ফরজান ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করতেই বাড়িতে ঢুকেছিল৷ সে জন্যই সোমবার রাতে সালিশি সভা বসে৷ সালিশি সভায় ফরজানের বাড়ির লোকেরাই নিজে থেকে মেয়ের বিয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা দিতে চায়৷ সেখানে ফরজানের ভাইকে বিয়ের নিদান কখনওই দেওয়া হয়নি৷’’ নাসিরুদ্দিনের অভিযোগ, সালিশি সভার পরে বাড়ির লোকেরা বকাবকি করায় সে জন্যও খলিলুর আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।
এ দিন সকাল থেকেই ওই তরুণীর বাড়ির লোকজন বেপাত্তা।