Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হাসিনার সফরে তিস্তার জলে ফের উঠল ঢেউ

তিস্তাকে ঘিরে টানাপড়েন তাই অব্যাহত প্রায় চার দশক ধরে। শেখ হাসিনা থেকে খালেদা জিয়া বারবার তিস্তার জলের অংশ বাড়ানোর দাবি করেছেন। এই রশি টানাটানির মধ্যে দেখে নেওয়া যাক তিস্তা নিয়ে ভাবনা ঠিক কী রকম।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনা হবে তিস্তা জলবন্টন প্রকল্প নিয়েও।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনা হবে তিস্তা জলবন্টন প্রকল্প নিয়েও।

কৌশিক চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

তিস্তা ঘিরে রয়েছে এপার বাংলা-ওপার বাংলা। বহু মানুষের চাষের ভরসা তিস্তা। সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ অবধি রয়েছে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। তিস্তাকে ঘিরে টানাপড়েন তাই অব্যাহত প্রায় চার দশক ধরে। শেখ হাসিনা থেকে খালেদা জিয়া বারবার তিস্তার জলের অংশ বাড়ানোর দাবি করেছেন। এই রশি টানাটানির মধ্যে দেখে নেওয়া যাক তিস্তা নিয়ে ভাবনা ঠিক কী রকম।

তিস্তার ইতিকথা

হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হয়ে ৪১৪ কিলোমিটার ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে মেশে। এর মধ্যে সিকিমে রয়েছে ১৫২ কিলোমিটার, সিকিমের সীমানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের আওতায় ১৪২ কিলোমিটার। দু’পাশের অববাহিকা ১.৭৫ লক্ষ স্কোয়ার কিলোমিটার। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের ১৪ শতাংশ তিস্তার জলে নির্ভরশীল। সেখানে উত্তরবঙ্গের চারটি জেলার কৃষি ব্যবস্থা ৯ লক্ষ ২২ হাজার হেক্টর জমি তিস্তার উপর নির্ভরশীল।

জলবণ্টনের জটিলতা

১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন। ১৯৮৩ সালে চুক্তি সম্পন্ন, ভারতের অংশ-৩৯ শতাংশ, বাংলাদেশ-৩৬, বণ্টন না হওয়া-২৫ শতাংশ। ১৯৮৪ সালে ফের চুক্তির আলোচনা। ২০১১ সালে নতুন করে অন্তর্বর্তী চুক্তি নিয়ে আলোচনা। ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ থাকার কথা ছিল। ভারতের অংশ ৪২.৫ শতাংশ, বাংলাদে‌শের ৩৭.৫ শতাংশর প্রস্তাব। পশ্চিমবঙ্গের জোরাল এবং সিকিমেরও আপত্তিতে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি ঝুলে গিয়েছে। বাংলাদেশের দাবি, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল শুখার মরসুমে তাঁদের শস্য এবং তিস্তা সেচ প্রকল্প বাঁচাতে ৫০ শতাংশ জল প্রয়োজন। সেখানে ভারত ৫৫ শতাংশ জল সব সময় নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের দাবি

নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শীত এবং শুখার মরসুমে জলের পরিমাণ এমনিতেই কমছে। এ ছাড়া ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের চারটি জেলার কৃষি ব্যবস্থা ৯ লক্ষ ২২ হাজার হেক্টর জমি তিস্তার উপর নির্ভরশীল। আবার ৬৭.৬০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎও উৎপাদন হচ্ছে। জল বেশি ছাড়লে চাষ থেকে জলবিদ্যুৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাজ্যের বিকল্প প্রস্তাব

তিস্তার বদলে তোর্সার জলবণ্টন করা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি স্তরে এই প্রস্তাব দেন। তিস্তার মত যৌথ নদী কমিশন গঠন করে জলবন্টন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

নতুন আলোচনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনা হবে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিস্তা জলবণ্টনের বিষয়টি তোলা হবে।

কে কী বলছেন

নদী গবেষক জাতিস্মর ভারতী বলেন, ‘‘তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক সনদ মেনে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করতে হবে।’’ প্রাক্তন বাম সাংসদ জিতেন দাস বলেন, ‘‘আমাদের এখানেই তিস্তার জলের পরিমাণ খুব অল্প, কৃষকেরা জল পান না। তার ওপরে যদি বাংলাদেশকে জল দেওয়া হয়, তা হলে তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’ বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বিজন গোস্বামী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sheikh Hasina Teesta Water pact
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE