Advertisement
E-Paper

বঞ্চনার জন্যই বাজেটে ঘাটতির দাবি

রাজ্য সরকারের থেকে আর্থিক সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ আগে থেকেই তুলেছেন। তাই অনেক খাতে খরচের বরাদ্দ কমিয়েই বাজেট পেশ করতে হল বলে দাবি করলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:৫৩
বাজেট পেশ মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

বাজেট পেশ মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রাজ্য সরকারের থেকে আর্থিক সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ আগে থেকেই তুলেছেন। তাই অনেক খাতে খরচের বরাদ্দ কমিয়েই বাজেট পেশ করতে হল বলে দাবি করলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার পুরসভায় ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছরে জন্য তিনি ১৯৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করেছেন। তাতে আয়, ব্যয়ের হিসাবে ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকার ঘাটতি দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাজেট নিয়ে আলোচনা এবং পাশ করাতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য বাজেটকে পরিকল্পনাহীন বলে জানিয়েছেন।

মেয়রের দাবি, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়েই বাজেট করতে হয়েছে। উন্নয়নমুখী বাজেট করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু আলোচনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। সেই মতো আম্রুত-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে শিলিগুড়ির উন্নয়নে বরাদ্দ করা হবে বলে আমরা আশাবাদী। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সহায়তা মেলেনি বললে যদি রাজনীতি হয় উন্নয়নের জন্য সেই রাজনীতি করছি।’’ তৃণমূল কাউন্সিলরদের পাল্টা অভিযোগ, বাজেটে শহরের পার্কিং সমস্যা থেকে পানীয় জল কোনও ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু পরিকল্পনার কোনও দিশা নেই। বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল বলেন, ‘‘রাজ্যের কাছ থেকে টাকা মিলছে না বলে শুরু থেকেই রাজনীতি করতে চাইছেন।’’ এই বাজেট শহরের উন্নয়নকে পিছিয়ে দেবে বলে তিনি দাবি করেন।

সিপিএমের সঙ্গে বিধানসভায় জোটে থাকলেও সিপিএমের হয়ে জয়ী মেয়রকে বিঁধতে ছাড়েনি কংগ্রেস। পুরসভার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা সুজয় ঘটকের অভিযোগ, অর্থ দরকার নেই, শুধু সদিচ্ছা থাকলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করা, সাফাই পরিষেবা, নদী খাত থেকে জবর দখল উচ্ছেদ করার মতো অনেক কাজ করা যায়। সে সব নিয়ে ভাবনা চিন্তার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। বাজেটে সে সব কাজ করার জন্যও কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি। পরিষেবা নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। বিজেপি কাউন্সিলর খুশবু মিত্তলও জানিয়েছেন, বাজেটে নতুন কিছু পরিকল্পনা নেই।

গত আর্থিক বছরে পুর বাজেটে মেয়র ১৮৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার আয়ের হিসাব ধরেছিলেন। এ বছর সেই তুলনায় বাজেটে আয় এবং খরচের হিসাব অনেকটাই বাড়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। মেয়রের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার সাধারণ উন্নয়ন খাতে ১০ কোটি ধরা হয়েছিল আগের বাজেটে। কিন্তু কোনও টাকা মেলেনি। এ বার অর্ধেক ধরা হয়েছে। বিআরজিএফ খাতে গত আর্থিক বছরের বাজেটে ধরা হয়েছিল ৫৬ লক্ষ টাকার মতো। ৬০ হাজার টাকার মতো মিলেছে। এ বার তাই ধরা হয়নি। রাজ্যের পূর্ত, জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকেও কোনও বরাদ্দ ধরা হয়নি।’’ মেয়রের দাবি, এখনও রাজ্যের কাছে ৭১ কোটি টাকা পাওনা পড়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা পেতে দেরি হয়েছে। তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকা মেলেনি। অথচ অন্য পুরসভাগুলি তা পেয়েছে। আরও বিভিন্ন প্রাপ্য খাতে টাতা শিলিগুড়ি পুরসভাকে দেওয়া হচ্ছে না।’’ তবে বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের নান্টু পাল পাল্টা দাবি করেছেন, রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্য মিলছে না বলে মেয়র ঠিক কথা বলছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে পুরসভাকে প্রচুর অর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। সে সব বিস্তারিত বাজেটে তিনি উল্লেখও করেননি।’’

তবে ‘বঞ্চনার’ নানা অভিযোগ এ দিন তোলেন মেয়র। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আম্রুত প্রকল্প থেকে শিলিগুড়িকে কার্যত বাদ রাখা হয়েছে। কেবল পার্ক সংস্কারের জন্য কিছু টাকা মিলছে ওই খাতে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান, হাইজিং ফর অল প্রকল্পে শিলিগুড়ির নাম কার্যত বাদ রাখা হয়েছে। স্মার্টসিটি প্রকল্প থেকে শিলিগুড়ি বাদ রয়েছে। কেন্দ্র রাজ্যের প্রকল্প ভিত্তিক যে আর্থিক সহায়তা পুরসভাকে করা উচিত তা মিলছে না। সামাজিক প্রকল্পে ৩৫০ টাকা করে যে ভাতা বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয় গত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করার কথা ছিল। একই ভাবে প্রাপকের সংখ্যাও ৫০০ জন বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এ বার বাড়ানো হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন। বয়স্কদের ৪৫০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে।

ঘাটতি মেটাতে আয় বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেয়র। কর আদায়ের জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায় বাকি রয়েছে। বিজ্ঞাপন ও হোর্ডিং থেকে আয় বৃদ্ধি, ডিসপ্লে কর চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। টোটোগুলি পুরসভার রাস্তা ব্যবহার করে বলে ফি লাগু করার প্রস্তাব রাজ্যের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল টাওয়ারের থেকেও ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্মীয়মাণ বাজারে স্টল বিক্রি করে আয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

CPM Congress TMC Budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy