মগ্ন: বরাত অল্পই। নিজস্ব চিত্র।
সংসার চালাতে জীবনযুদ্ধে হার না মানার লড়াইয়ে নেমেছিলেন অনেক আগেই। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সামলে নিজের চেষ্টায় তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দর্জির দোকান। করোনার সময় থেকে তেমন কাজ নেই। সামনে পুজো। তবুও তেমন বরাত না মেলায় মিনুর মন ভার।
হলদিবাড়ি শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধুপাড়া রোডে দর্জির দোকান মিনুরানি সরকারের। প্রায় সাত বছর ধরে সেলাইয়ের যন্ত্রে পা চালিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। শনিবার হলদিবাড়ির হাটের দিন। কিন্তু তাঁর দোকানে নেই ভিড়। গলায় ফিতে ঝুলিয়ে আপন মনে মহিলাদের নতুন পোশাক সেলাই করছিলেন মিনু।
কেমন চলছে কাজ? প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মিনুর থেকে জানা গেল, মেখলিগঞ্জের চ্যাংড়াবান্ধার দেবী কলোনিতে ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়ি। সেখানের একটি চা বাগানে কাজ করতেন। হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় বাগান। সংসারে আর্থিক সঙ্কট। তখনই চলে এসেছিলেন বাবার বাড়িতে। মা একটি সেলাইয়ের যন্ত্র কিনে দেন। প্রথমে বাড়িতেই প্রতিবেশীদের পুরোনো জামাকাপড় সেলাই করতে করতে হাত পাকিয়ে ফেলেন মিনু। দুই সন্তান কোলে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দেন হলদিবাড়িতে। রেলের জমিতে পাতেন সংসার। দোকান ভাড়া নিয়ে নিজেই কাজ করতে শুরু করেন।
সেই সুখও তাঁর কপালে সয়নি। ছোট দুই ছেলেকে রেখে হঠাৎই এক দিন স্বামী বেপাত্তা হয়ে যান। সংসারের পুরো চাপটাই এসে পড়ে মিনুর কাঁধে। ঘাড় গুঁজে কাজ করতে করতে কিনেছেন মাথা গোঁজার মতো একটা জমি। আর তার পরেই আবার ঝাপটা। করোনা এসে এলোমেলো করে দিয়েছে সব। সুযোগ পেয়ে আবার ফিরে এসেছে অনটন। মিনু বলেন, ‘‘আমাদের মাছ-ভাত খাওয়ার অধিকার অনেকদিন আগেই কেড়ে নিয়েছে রেডিমেড পোশাক। তা-ও যা ছিল, করোনা শুরুর পর থেকে এক প্রকার বসেই আছি। সামনে পুজো, দু’-একটা যা বরাত পাচ্ছি। দুর্গা মায়ের কাছে শুধু প্রার্থনা, আমার সন্তানরা যেন দুধে-ভাতে থাকতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy